ছারপোকা তাড়ানোর উপায়

আপনার বিছানায় কি ছারপোকা হয়েছে? আর ছারপোকার উপদ্রবে রোজ সকালে উঠেই আপনাকে প্রাণপণে গা-হাত-পা চুলকোতে হচ্ছে?

ছারপোকা তাড়ানো অনেক উপায় আছে, তারমধ্যে কার্যকরী কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো, সুবিধা মতো উপায়গুলো ব্যবহার করুন।

ছারপোকা তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায়

১) গরম পানি: ছারপোকা দমনের খুব কার্যকরী উপায় হল গরম পানি। গরম পানিতে শুধুমাত্র ছারপোকাই না সাথে ব্যাকটেরিয়া সহ আরো অনেক অণুজীবই মারা যায়। এজন্য আপনাকে আপনার পরিধেয় জামাকাপর গুলো গরম পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। এরপর আপনার রুমটিকেও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ছারপোকা মুক্ত করতে হবে। ধোওয়ার পর ভালভাবে জামাকাপর ও রুম শুকাতে হবে। ছারপোকা মারার জন্য যদিও ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই যথেষ্ট তবুও ফুটন্ত পানি কিছুটা ঠাণ্ডা করেই রুম ধয়া উচিত।


ছারপোকা তাড়ানোর উপায়

২) সূর্যের তাপ: ছারপোকা দমন এর আরেকটি পদ্ধতি হল সূর্যের তাপ এর ব্যবহার। ছারপোকা দমনে রোধ একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। সেই প্রাচীন কাল থেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। গ্রামেগঞ্জে এখনো এই পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়। এক্ষেত্রে যেসব জিনিস গরম পানি দিয়ে ধোওয়া যাবে না বা ধোওয়া অনেক কষ্টসাধ্য সেগুলো সকালে রোধে দিতে হয়। শক্তিশালী রোধের তাপমাত্রায় ছারপোকাগুলো মারা যায় এবং সাথে তাদের ডিমও।

৩) ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার: যদিও এই পদ্ধতিটি বাংলাদেশিদের কাছে অতটা জনপ্রিয় নয় তবুও এটি ছারপোকা দমনের অন্যতম কার্যকরী উপায়। এজন্য যেসব স্থানে ছারপোকা রয়েছে সেসব স্থানে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দ্বারা পরিষ্কার করুন। এক্ষেত্রে একাধিক বার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে পরিষ্কার করা উচিত। এতে করে ছারপোকার ডিমসহ ছারপোকা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে চলে যাবে। তবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি বাড়ির বাইরে নিয়ে পরিষ্কার করুন এবং গরম পানি দিয়ে ছারপোকা মেরে ফেলুন ও ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি ধুয়ে নিন।

৪) প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার: ছারপোকা দমন এর আরেকটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হল প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার। এক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত কীটনাশকটি হল ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ (Diatomaceous earth)। বহু ছারপোকা দমনকারী সংস্থাও এটি ব্যবহার করে। এজন্য যেসব স্থানে ছারপোকা থাকে যেমন বিছানা, ঘরের কোণা, সোফা ইত্যাদিতে খুব পাতলা করে ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ (Diatomaceous earth) ছিটিয়ে রাখুন। টেক্সাস এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটি অনুযায়ী, ছারপোকারা যখন ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ এর সংস্পর্শে আসে তখন এর রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে ছারপোকা শুকিয়ে মারা যায়।

৫) পুদিনাপাতা: অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ছারপোকা পুদিনাপাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই বিছানা থেকে ছারপোকা তাড়াতে বিছানার নিচে পুদিনা পাতা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে শুঁকনো পুদিনা পাতাতেও কাজ হবে। এছাড়া আপনি আপনার সোফার পাশে, বাড়ির প্রতিটি কোণে কোণেও পুদিনা পাতা রাখতে পারেন। আর এজন্যই অভিজ্ঞরা ভ্রমণের সময় বা ট্যুর এর বিছানা গুলোতে শুকনো পুদিনাপাতা রাখতে পরামরশ দেন।

৬) ন্যাপথলিন : ঘরের ছারপোকা তাড়াতে ন্যাপথলিন খুবই কার্যকারী। পোকাটি তাড়াতে অন্তত মাসে দু’বার ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে বিছানাসহ উপদ্রবপ্রবণ স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে রাখুন। দেখবেন ঘরে ছারপোকা হবে না।

৭) কেরোসিনের প্রলেপ: ছারপোকা তাড়াতে মাঝে মাঝে আসবাবপত্রে কেরোসিনের প্রলেপ দিন। এতে ছারপোকা সহজেই পালাবে।

৮) ঘর পরিষ্কার করুন: সপ্তাহে একবার হলেও সারা ঘর ভালো করে পরিষ্কার করুন। ছারপোকা মোটামুটি ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রাতে মারা যায়। ঘরে ছারপোকার আধিক্য বেশি হলে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা ও ঘরের ছারপোকা আক্রান্ত জায়গাগুলোর কাপড় বেশি তাপে সিদ্ধ করে ধুয়ে ফেলুন। ছারপোকা এতে মারা যাবে।

৯) স্প্রে করুন: ঘরের যে স্থানে ছারপোকার বাস সেখানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন। দুই থেকে তিন দিন এভাবে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা আপনার ঘর ছেড়ে পালাবে।

১০) আসবাবপত্র ও লেপ-তোশক: আসবাবপত্র ও লেপ-তোশক পরিষ্কার রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত রোদে দিন। এতে করে ছারপোকার আক্রমণ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই ছারপোকা থাকলে সেগুলো মারা যাবে।

১১) অ্যালকোহল: আপনার ঘরের ছারপোকা তাড়াতে অ্যালকোহল ব্যবহার করতে পারেন। ছারপোকাপ্রবণ জায়গায় সামান্য অ্যালকোহল স্প্রে করে দিন দেখেবেন ছারপোকা মরে যাবে।

১২) বিছানা দেয়াল থেকে দূরে: ছারপোকার হাত থেকে রেহাই পেতে আপনার বিছানা দেয়াল থেকে দূরে স্থাপন করুন। শোয়ার আগে ও পরে বিছানা ভালো করে ঝেড়ে ফেলুন সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url