বুদ্ধির অভীক্ষা কাকে বলে?

  • বুদ্ধির অভীক্ষা কাকে বলে? 
  • বুদ্ধির অভীক্ষা শ্রেণীবিভাগ 
  • বুদ্ধির অভীক্ষা বৈশিষ্ট্য 
  • বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা 
  • বুদ্ধির অভীক্ষা সুবিধা ও অসুবিধা

বুদ্ধির অভীক্ষা কাকে বলে?

বুদ্ধি পরিমাপের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে প্রস্তুত প্রশ্নের সমাহারকে বুদ্ধি অভীক্ষা বলে।

বুদ্ধির অভীক্ষা হল এমন একটি পরীক্ষা যা ব্যক্তির বুদ্ধিগত ক্ষমতা, যেমন: সমস্যা সমাধান, যুক্তি, চিন্তাভাবনা, অভিযোজন ইত্যাদির একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করে।

বুদ্ধির অভীক্ষা হল এমন একটি পরীক্ষা যা ব্যক্তির বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ করে। বুদ্ধি হল একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়া যা সমস্যা সমাধান, যুক্তি, চিন্তাভাবনা, অভিযোজন ইত্যাদি ক্ষমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে এই ক্ষমতাগুলোর একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করা হয়।

বুদ্ধির অভীক্ষার প্রশ্নগুলো বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। যেমন: ভাষা, গণিত, চিত্রকল্প, যুক্তি, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ইত্যাদি। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর বুদ্ধিগত ক্ষমতার একটি ধারণা পাওয়া যায়।

বুদ্ধির অভীক্ষা শ্রেণীবিভাগ

বুদ্ধির অভীক্ষাকে বিভিন্ন ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ শ্রেণীবিভাগ হল নিম্নরূপ:

  • ব্যক্তিভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা (Individual intelligence test): এই ধরনের অভীক্ষা একজন ব্যক্তির সাথে এক-এক করে করা হয়। অভীক্ষককে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় বা বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে হয়। অভীক্ষকের উত্তর বা কাজের উপর ভিত্তি করে তার বুদ্ধিগত ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়।
  • দলগত বুদ্ধি অভীক্ষা (Group intelligence test): এই ধরনের অভীক্ষা একসাথে অনেক ব্যক্তির সাথে করা হয়। অভীক্ষকদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় বা নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে হয়। অভীক্ষকদের উত্তর বা কাজের উপর ভিত্তি করে তাদের বুদ্ধিগত ক্ষমতার একটি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যায়।

বুদ্ধির অভীক্ষার অন্যান্য শ্রেণীবিভাগ

  • ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা (Verbal intelligence test): এই ধরনের অভীক্ষা ভাষাগত দক্ষতা, যেমন: শব্দভান্ডার, জ্ঞান, যুক্তি, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
  • কর্মসম্পাদনী বুদ্ধি অভীক্ষা (Performance intelligence test): এই ধরনের অভীক্ষা ভাষাগত দক্ষতা ছাড়াও অন্যান্য দক্ষতা, যেমন: চিত্রকল্প, যুক্তি, সমস্যা সমাধান ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
  • সামগ্রিক বুদ্ধি অভীক্ষা (Global intelligence test): এই ধরনের অভীক্ষা বুদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্রকে একসাথে পরিমাপ করে।
  • বিশেষ বুদ্ধি অভীক্ষা (Special intelligence test): এই ধরনের অভীক্ষা কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বুদ্ধি, যেমন: গণিত, বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

বুদ্ধির অভীক্ষা বৈশিষ্ট্য

বুদ্ধির অভীক্ষার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো হল:

  • বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ: বুদ্ধির অভীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ করা। বুদ্ধি হল একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়া যা সমস্যা সমাধান, যুক্তি, চিন্তাভাবনা, অভিযোজন ইত্যাদি ক্ষমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে এই ক্ষমতাগুলোর একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করা হয়।
  • সাধারণীকরণ: বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল সাধারণীকরণ করা যায়। অর্থাৎ, একই অভীক্ষার ফলাফল বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে তুলনা করা যায়। এটি সম্ভব হয় কারণ বুদ্ধির অভীক্ষার প্রশ্নগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যা বিভিন্ন ব্যক্তির সাধারণ বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ করে। 
  • সামগ্রিকতা: বুদ্ধির অভীক্ষা ব্যক্তির বুদ্ধির সামগ্রিক ধারণা দেয়। অর্থাৎ, বুদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন: ভাষাগত দক্ষতা, চিত্রকল্প, যুক্তি, সমস্যা সমাধান ইত্যাদির একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করে। 
  • নির্ভরযোগ্যতা: বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল নির্ভরযোগ্য হওয়া উচিত। অর্থাৎ, একই অভীক্ষা একই ব্যক্তিকে একই অবস্থায় একাধিকবার দেওয়া হলে ফলাফল একই হওয়া উচিত। 
  • যোগ্যতা: বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল যোগ্য হওয়া উচিত। অর্থাৎ, অভীক্ষার ফলাফল অভীক্ষকের প্রকৃত বুদ্ধিগত ক্ষমতার প্রতিফলন হওয়া উচিত। 

বুদ্ধির অভীক্ষার এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিশ্চিত করার জন্য অভীক্ষাগুলোকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়।

বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা

বুদ্ধির অভীক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তাগুলো হল:

  • শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করা: শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করা তাদের শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিগত ক্ষমতার একটি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যায়। এই ধারণার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
  • ব্যতিক্রমিক শিশুদের চিহ্নিত করা: বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে ব্যতিক্রমিক শিশুদের চিহ্নিত করা সম্ভব। ব্যতিক্রমিক শিশুদের মধ্যে রয়েছে প্রতিভাশালী শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু এবং অটিস্টিক শিশু। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে এই শিশুদের সনাক্ত করা যায় এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সহায়তা প্রদান করা সম্ভব।
  • কর্মচারীদের নির্বাচন করা: কর্মচারীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে কর্মচারীদের বুদ্ধিগত ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, যুক্তি করার দক্ষতা ইত্যাদির একটি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যায়। এই ধারণার ভিত্তিতে কর্মচারীদের নির্বাচন করা হয়।
  • শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রণয়ন করা: বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিগত ক্ষমতার একটি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যায়। এই ধারণার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রণয়ন করা সম্ভব।

বুদ্ধির অভীক্ষা সুবিধা ও অসুবিধা

বুদ্ধির অভীক্ষার সুবিধা

বুদ্ধির অভীক্ষার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো হল:

  • বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ: বুদ্ধির অভীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ করা। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির বুদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন: ভাষাগত দক্ষতা, চিত্রকল্প, যুক্তি, সমস্যা সমাধান ইত্যাদির একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করা হয়।
  • সাধারণীকরণ: বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল সাধারণীকরণ করা যায়। অর্থাৎ, একই অভীক্ষার ফলাফল বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে তুলনা করা যায়। এটি সম্ভব হয় কারণ বুদ্ধির অভীক্ষার প্রশ্নগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যা বিভিন্ন ব্যক্তির সাধারণ বুদ্ধিগত ক্ষমতা পরিমাপ করে।
  • ব্যতিক্রমিক শিশুদের চিহ্নিত করা: বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে ব্যতিক্রমিক শিশুদের চিহ্নিত করা সম্ভব। ব্যতিক্রমিক শিশুদের মধ্যে রয়েছে প্রতিভাশালী শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু এবং অটিস্টিক শিশু। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে এই শিশুদের সনাক্ত করা যায় এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সহায়তা প্রদান করা সম্ভব।
  • শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রণয়ন করা: বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিগত ক্ষমতার একটি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যায়। এই ধারণার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রণয়ন করা সম্ভব।

বুদ্ধির অভীক্ষার অসুবিধা

বুদ্ধির অভীক্ষার বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধাগুলো হল:

  • বুদ্ধির একক সংজ্ঞা: বুদ্ধি একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়া। এর কোনো একক সংজ্ঞা নেই। বুদ্ধির অভীক্ষাগুলো বুদ্ধির বিভিন্ন দিক পরিমাপ করে। কিন্তু এই দিকগুলোর মধ্যে কোনটি বুদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
  • সাংস্কৃতিক প্রভাব: বুদ্ধির অভীক্ষাগুলো সাংস্কৃতিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। অর্থাৎ, এক সংস্কৃতির অভীক্ষা অন্য সংস্কৃতির ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
  • অন্যান্য বিষয়ের প্রভাব: বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল অন্যান্য বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। যেমন: স্বাস্থ্য, আবেগ, মনোযোগ ইত্যাদি।
  • নির্বাচনী প্রভাব: বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল নির্বাচনী প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। অর্থাৎ, অভীক্ষার প্রশ্নগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যা নির্দিষ্ট ধরনের ব্যক্তিদের জন্য সুবিধাজনক।

উপসংহার

বুদ্ধির অভীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক পরীক্ষা। এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। বুদ্ধির অভীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করার সময় এই অসুবিধাগুলো বিবেচনা করা উচিত।

আরো পড়ুনঃ থটরিডিং কি?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url