প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস

বিজ্ঞান : অষ্টম শ্রেণি 


প্রথম অধ্যায় 

প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস 



পাঠ ১: প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস


তোমরা তোমাদের চার পাশের ছোটবড় নানা বৈচিতত্র্যপূর্ণ প্রাণী দেখতে পাও। তোমাদের ষষ্ঠশ্রেণিতে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রাণিজগৎ সম্পর্কে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা কর। তোমার দেখা প্রাণীগুলো দেখতে কি একই রকম? এদের সবগুলোরই কি মেরুদন্ড আছে? এরা সবাই কি একই পরিবেশে বাস করে?এরা কি একই রকম খাবার খায়? এরা কি একইভাবে চলাফেরা করে?

এবার তুমি নিচের উত্তরগুলোর সাথে তোমার চিন্তাকে মিলিয়ে নাও। আমাদের চারপাশে আমরা যে প্রাণীগুলোকে দেখি তার সবগুলো দেখতে এক রকম হয় না। এদের দেহের আকৃতি, গঠন ও অন্যান্য জৈবিক কাজকর্মের প্রকৃতিও ভিন্ন। এদের কোনোটির মেরুদন্ড আছে, আবার কোনোটির মেরুদন্ড নেই। এদের কোনোটি মাটিতে, কোনোটি পানিতে, কোনোটি গাছে বাস করে। এদের খাদ্যো বিভিন্ন প্রকারের হয়। এরা বিভিন্ন অঙ্গ (সিলিয়অ, পা, উপাঙ্গ ইত্যাদি) দিয়ে চলাফেরা করে, আবার কোনোটির চলনমক্তি নেই।

পৃথিবীতে এ রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীর সংখ্যা আমাদের সঠিক জানা নেই। আজ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিপুল সংখ্যক প্রাণীর গঠন ও প্রকৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনের সহজ উপায় হলো শ্রেণিবিন্যাস। প্রাণিদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে মিল, অমিল ও পরস্পরের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তার উপর বিত্তি করে শ্রেণিবিনাস করা হয়। এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর বা ধাপে সাজানো হয়। জীবজগৎকে ধাপে ধাপে বিন্যস্ত করার এই পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। প্রয়োজনের তাগিদে বর্তমানে জীববিজ্ঞানের একটি স্বতস্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে। এর নাম শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা। 

প্রজাতি হলো শ্রেণিবিন্যাসের সবচেয়ে নিচের ধাপ বা একক। যেমন- মানুষ, কুনোব্যাঙ, কবুতর ইত্যাদি এক একটি প্রজাতি। কোনো প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস করতে হলে সেই প্রাণীকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ধাপে ধাপে সাজাতে হয়। এই সকল ধাপের প্রত্যেকটিকে যথাযথভাবে বিন্যস্ত করতে হয়।

শ্রেণিবিন্যাসের ইতিহাসে অ্যারিস্টটল, জন রে ও ক্যারোলাস লিনিয়াসের নাম উল্লেখযোগ্য। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াসকে শ্রেণিবিন্যাসের জনক বলা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম প্রজাতির বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন এবঙ দ্বিপদ বা দুই অংশ বিশিষ্ট নামকরণ প্রথা প্রবর্তন করেন। একটি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম দুই অংশ বা পদবিশিষ্ট হয়। এই নামকরণকে দ্বিপদ নামকরণ বা বৈজ্ঞানিক নামকরণ বলে। যেমন- মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম- Homo sapiens । বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাটিন অথবা ইংরেজি ভাষার লিখতে হয়।

পাঠ ২ – ৫: অমেরুদন্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস


আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে সকল প্রাণী অ্যানিম্যালিয়া(Animalia)জগতের (kingdom)অন্তর্ভূক্ত। এই শ্রেণিবিন্যাসে পূর্বের প্রোটোজোয়া পর্বটি প্রোটিস্টা (Protista)জগতে একটি আলাদা উপজগৎ (Subkingdom) হিসেবে স্থান পেয়েছে।

অ্যানিম্যালিয়া জগতের প্রাণীদের নয়টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এই নয়টি পর্বের প্রথম আটটি পর্বের প্রাণীরা অমেরুদন্ডী এবং শেষ পর্বের প্রাণীরা মেরুদন্ডী।

এক নজরে অ্যানিম্যালিয়া জগতের শ্রেণিবিন্যাস


১. পর্ব: পরিফেরা (Porifera)

স্বভাবও বাসস্থান: পরিফেরা পর্বের প্রাণীরা সাধারণভাবে স্পঞ্জ নামে পরিচিত। পৃথিবীর সর্বত্রই এদের পাওয়া যায়। এদের অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক। তবে কিছু কিছু প্রাণী স্বাদু পানিতে বাস করে। এরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে।


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • সরলতম বহুকোষী প্রাণী
  •  দেহপ্রাচীর অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এই ছিদ্রপথে পানির সাথে অক্সিজেন ও খাদ্যবস্তু প্রবেশ করে।
  • কোনো পৃথক সুগঠিত কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র থাকে না।
উদাহরণ: Spongilla, Scypha 

২. পর্ব: নিডারিয়া(Cnidaria)

এই পর্ব ইতোপূর্বে সিলেন্টারেটা নামে পরিচিত ছিল।
স্বভাব ও বাসস্থান: পৃথিবীর প্রায় সকল অঞ্চলে এই পর্বের প্রাণী দেখা যায়। এদের অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক। তবে অনেক প্রজাতি খাল, বিল, নদী, হ্রদ, ঝরনা ইত্যাদিতে দেখা যায়। এই পর্বের প্রাণীগুলো বিচিত্র বর্ণ ও আকার-আকৃতির হয়। এদের কিছু প্রজাতি এককভাবে আবার কিছু প্রজাতি দলবদ্ধভাবে কলোনি গঠন করে বাস করে। এরা সাধারণত পানিতে ভাসমান কাঠ, পাতা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে দেহকে আটকে রেখে বা মুক্তভাবে সাঁতার কাটে।

 
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ দুটি ভ্রূণীয় কোষস্তর দ্বারা গঠিত। দেহের বাইরের দিকের স্তরটি এক্টোডার্ম এবং ভিতরের স্তরটি এন্ডোডার্ম।
  • দেহ গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে। এটা একাধারে পরিপাক ও সংবহনে অংশ নেয়।
  • এক্টোডার্মে নিডোব্লাস্ট নামে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোষ থাকে। এই কোষ গুলো শিকার ধরা, আত্মরক্ষা, চলন ইত্যাদি কাজে অংশ নেয়।
উদাহরণ: Hydra, Obelia

৩. পর্ব: প্লাটিহেলমিনথেস (Platyhelminthes)

স্বভাব ও বাসস্থান: এই পর্বের প্রাণীদের জীবনযাত্রা বেশ বৈচিত্র্যময়। এই পর্বের বহু প্রজাতি বহিঃপরজীবী বা অন্তঃপরজীবী হিসেবে অন্য জীবদেহের বাইরে বা ভিতরে বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতি মুক্তজীবী হিসেবে স্বাদু পানিতে আবার কিচু প্রজাতি লবণাক্ত পানিতে বাস করে। এই পর্বের কোনো কোনো প্রাণী ভেজা ও সেঁতসেঁতে মাটিতে বাস করে। 



সাধারণ বৈশিষ্ট্য

  • দেহ চ্যাপ্টা, উভয়লিঙ্গ।
  • বহিঃপরজীবী বা অন্তঃপরজীবী।
  • দেহ পুরু কিউটিকল দ্বারা আবৃত।
  • দেহে চোষক ও আংটা থাকে।
  • দেহে শিখা অঙ্গ নামে বিশেষ অঙ্গ থাকে, ও গুলো রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
  • পৌষ্টিকতন্ত্র অসম্পূর্ণ বা অনুপস্থিত।
উদাহরণ: যকৃৎ কৃমি, ফিতা কৃমি।


৪. পর্ব: নেমাটোডা (Nematoda)

অনেকে একে নেমাথেলমিনথেস বলে।

স্বভাব ও বাসস্থান: এই পর্বের অনেক প্রাণী অন্তঃপরজীবী হিসেবে প্রানীর অন্ত্র ও রক্তে বসবাস করে। এসব পরজীবী বিভিন্ন প্রাণী ও মানবদেহে বাস করে নানারকম ক্ষতি সাধন করে। তবে অনেক প্রাণীই মুক্তজীবী, যারা পানি ও মাটিতে বাস করে। 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ নলাকার ও পুরু ত্বক দ্বারা আবৃত।
  • পৌষ্টিকনালি সম্পূর্ণ, মুখ ও পায়ু ছিদ্র উপস্থিত।
  • শ্বসনতন্ত্র ও সংবহনতন্ত্র অনুপস্থিত।
  • সাধারণ একলিঙ্গ।
  • দেহ গহ্বর অনাবৃত ও প্রকৃত সিলোম নাই।

উদাহরণ: গোলকৃমি, ফাইলেরিয়া কৃমি।


৫. পর্ব: অ্যানেলিডা (Annelida)

স্বভাব ও বাসস্থান: পৃথিবীর প্রায় সকল নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে এই পর্বের প্রাণীদের পাওয়া যায়। এদের বহু প্রজাতি স্বাদু পানিতে এবং কিছু প্রজাতি অগভীর সমুদ্রে বাস করে। এই পর্বের বহু প্রাণী সেঁতসেঁতে মাটিতে বসবাস করে। কিছু প্রজাতি পাথর ও মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে। 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ নলাকার ও খন্ডায়িত।
  • নেফ্রিডিয়া নামক রেচন অঙ্গ থাকে।
  • প্রতিটি খন্ডে সিটা থাকে (জোঁকে থাকে না)। সিটা চলাচলে সহায়তা করে।
উদাহরণ: কেঁচো, জোঁক।

৬. পর্ব: আর্থোপোডা (Arthropoda)

স্বভাব ও বাসস্থান:
এই পর্বের প্রাণিজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম পর্ব। এরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র সকল পরিবেশে বাস করতে সক্ষম। এদের বহু প্রজাতি অন্তঃপরজীবী ও বহুপরজীবী হিসেবে বাস করে। বহু প্রাণী স্থলে, স্বাদু পানিতে ও সমুদ্রে বাস করে। এ পর্বের অনেক প্রজাতির প্রাণী ডানার সাহায্যে উড়তে পারে। 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত ও সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান।
  • মাথায় একজোড়া পুঞ্জাক্ষি ও অ্যান্টেনা থাকে।
  • নরম দেহ কাইটিন সমৃদ্ধ শক্ত আবরণী দ্বারা আবৃত।
  • দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বর হিমোসিল নামে পরিচিত।
উদাহরণ: প্রজাপতি, চিংড়ি, আরশোলা, কাঁকড়া।

৭. পর্ব: মলাস্কা(Mollusca)

স্বভাব ও বাসস্থান: এই পর্বের প্রাণীদের গঠন, বাসস্থান ও স্বভাব বৈচিত্র্যর্পূণ। এরা পৃথিবীর প্রায় সকর পরিবেশে বাস করে। প্রায় সবাই সামুদ্রিক এবং সাগরের বিভিন্ন স্তরে বাস করে। কিছু কিছু প্রজাতি পাহাড়ি অঞ্চলে, বনেজঞ্জলে ও স্বাদু পানিতে বাস করে। 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ নরম। নরম দেহটি সাধারণত শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত থাকে।
  • পেশিবহুল পা দিয়ে এরা চলাচল কর।
  • ফুসফুস বা ফুলকার সাহায্যে শ্বসনকার্য চালায়।
উদাহরণ: শামুক, ঝিনুক।

৮. পর্ব: একাইনোডারমাটা (Echinodermata)

স্বভাব ও বাসস্থান: এই পর্বের সকল প্রাণী সামু্দ্রিক। পৃথিবীর সকল মহাসাগরে এবঙ সকল গভীরতায় এদের বসবাস করতে দেখা যায়। এদের স্থলে বা মিটা পানিতে পা্ওয়া যায় না।এরা অধিকাংশ মুক্তজীবী। 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহত্বক কাঁটাযুক্ত।
  • দেহ পাঁচটি সমান ভাগে বিভক্ত।
  • পানি সংবহনতন্ত্র থাকে এবং নালিপদের সাহায্যে চলাচল করে।
  • পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে অঙ্কীয় ও পৃষ্ঠদেশ নির্ণয় করা যায় কিন্তু মাথা চিহ্নিত করা যায় না।
উদাহরণ: তারামাছ, সমুদ্র শশা।

পাঠ ৬-৮: মেরুদন্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস



৯. পর্ব: কর্ডাটা (Chordata)


স্বভাব ও বাসস্থান: এরা পৃথিবীর সকল পরিবেশে বাস করে। এদের বহু প্রজাতি ডাঙ্গায় বাস করে। জলচর কর্ডাটাদের মধ্যে বহু প্রজাহত স্বাদু পানিতে অথবা সমুদ্রে বাস করে। বহু প্রজাতি বৃক্ষবাসী, মরুবাসী, মেরুবাসী, গুহাবাসী ও খেচর। কর্ডাটা পর্বের বহু প্রাণী বহিঃপরজীবী হিসেবে অন্য প্রাণী দেহে সংলগ্ন হয়ে জীবনযাপন করে। 

সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • এই পর্বের প্রাণীরা সারা জীবন অথবা ভ্রূণ অবস্থায় পৃষ্ঠীয়দেশ বরাবর নটোকর্ড অবস্থান করে। নটোকর্ড হলো একটি নরম, নমনীয়, দন্ডাকার, দৃঢ় ও অখন্ডায়িত অঙ্গ।
  • পৃষ্ঠদেশে একক, ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু থাকে।
  • সারা জীবন অথবা জীবন চক্রের কোনো এক পর্যায়ে পার্শ্বীয় গলবিলীয় ফুলকা ছিদ্র থাকে।
উদাহরণ: মানুষ, কুনোব্যাঙ, রুই মাছ।

কর্ডাটা পর্বকে তিনটি উপপর্বে ভাগ করা যায়। যথা-

ক. ইউরোকর্ডাটা (Urochordata) 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • প্রাথমিক অবস্থান ফুলকারন্ধ্র, পৃষ্ঠীয় ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু থাকে।
  • শুধুমাত্র নার্ভা দশায়্ এদেরে লেজে নটোকর্ড থাকে।
উদাহরণ: Ascidia

খ. সেফালোকর্ডাটা (Cephalochordata) 

সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • সারাজীবনই এদের দেহে নটোকর্ডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
  • দেখতে মাছের মতো।
উদাহরণ: Branchiostoma

গ. ভার্টিব্রাটা (Vertebrata)

এই উপ-পর্বের প্রাণীরাই মেরুদন্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরুদন্ডী প্রাণীদের ৭টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

১. শ্রেণি-সাইক্লোস্টোমাটা (Cyclostomata) 
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • লম্বাটে দেহ।
  • মুখছিদ্র গোলাকার এবং চোয়ালবিহীন।
  • এদের দেহে আঁইশ বা যগ্ম পাখনা অনুপস্থিত।
  • ফুলকাছিদ্রের সাহায্যে শ্বাস নেয়।
উদাহরণ: petromyzon ২. শ্রেণি-কনড্রিকথিস (Chondrichthyes) 


সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • এ পর্বের সকল প্রাণী সমুদ্রে বাস করে।
  • কঙ্কাল তরুণাস্থিময়।
  • দেহ প্ল্যাকয়েড আঁইশ দ্বারা আবৃত, মাথার দুই পাশে ৫-৭ জোড়া ফুলকাছিদ্র থাকে।
  • কানকো থাকে না।
উদাহরণ: হাঙ্গর, করাত মাছ, হাতুড়ি মাছ।

৩. শ্রেণি-অসইটকথিস (Osteichthyes) 

সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • অধিকাংশই স্বাদু পানির মাছ।
  • দেহ সাইক্লোয়েড, গ্যানয়েড বা টিনয়েড ধরনের আঁইশ দ্বারা আবৃত।
  • মাথার দুই পাশে চার জোড়া ফুলকা থাকে। ফুলকাগুলো কানকো দিয়ে ঢাকা থাকে। ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।
উদাহরণ: ইলিশ মাছ, সি-হর্স 

৪. শ্রেণি-উভচর (Amphibia)

মেরুদন্ডী প্রাণীর মধ্যে যারা জীবনের প্রথম অবস্থায় সাধারণত পানিতে থাকে এবং মাচের মতো বিশেষ ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়, পরিণত বয়সে যাঙ্গায় বাস করে তারাই উভচর। 

সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহত্বক আঁইশবিহীন।
  • ত্বক নরম, পাতলা, ভেজা ও গ্রন্থিযুক্ত।
  • শীতল রক্তের প্রাণী।
  • পানিতে ডিম পাড়ে। জীবনচক্রে সাধারণত ব্যাঙাচি দশা দেখা যায়। 
উদাহরণ: সোনাব্যাঙ, কুনোব্যাঙ।

৫. শ্রেণি-সরীসৃপ

সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • বুকে ভর করে চলে।
  • ত্বক শুষ্ক ও আঁইশযুক্ত।
  • চার পায়েই পাঁচটি করে নখরযুক্ত আঙ্গুল আছে।
উদাহরণ: টিকটিকি, কুমির, সাপ।

৬. শ্রেণি-পক্ষীকূল (Aves) 

সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ পালকে আবৃত।
  • দুটি ডানা, দুটি পা ও একটি চঞ্চু আছে।
  • ফুসফুসের সাথে বায়ুথলি থাকায় সহজে উড়তে পারে।
  • উষ্ণ রক্তের প্রাণী।
  • হাড় শক্ত, হালকা ও ফাঁপা।
উদাহরণ: কাক, দোয়েল, হাঁস।

৭. শ্রেণি-স্তন্যপায়ী (Mammalia)
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
  • দেহ লোমে আবৃত।
  • স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সন্তান প্রসব করে। তবে এর ব্যতিকম আছে, যেমন-প্লাটিপাস।
  • উষ্ণ রক্তের প্রাণী।
  • চোয়ালে বিভিন্ন ধরনের দাঁত থাকে।
  • শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে বড় হয়।
  • হৃৎপিন্ড চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।
উদাহরণ: মানুষ উট, বাঘ 

পাঠ ৯: শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা


লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে পৃথক পৃথক ভাবে শনাক্ত করা অসম্ভব ব্যাপার। কেবল মাত্র শ্রেণিবিন্যাসকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করে এ একাজটি করা সম্ভবপর হয়। একটি প্রাণীকে শনাক্ত করতে হলে প্রাধানত সাতটি ধাপে এর বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে নিতে হয়। ও ধাপগুলো হলো জগৎ (kingdom), পর্ব (Phylum), শ্রেণি (Class), বর্গ (Order), গোত্র (Family), গণ (Genus) ও প্রজাতি (Species)। অনেক সময় পর্বকে উপপর্ব বা Sub Phylum-এ ভাগ করা হয়। শ্রেণিবিন্যাসের সাহায্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সহজে, অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণী সম্বন্ধে জানা যায়। নতুন প্রজাতি শনাক্ত করতে শ্রেণিবিন্যাস অপরিহার্য। প্রাণিকূলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে প্রাণিকূলের মাঝে যে পরিবর্তন ঘটেছে বা ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অসংখ্য প্রাণিকূলকে একটি নির্দিষ্ট রীতিতে বিন্যস্ত করে গোষ্ঠীভুক্ত করা যায়। প্রাণীর মধ্যে মিল-অমিলের ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধ অর্জন করা যায়। প্রাণী সম্পর্কে সামগ্রিক ও পরিকল্পিত জ্ঞান অর্জন করা যায়। যেমন- সব এককোষী প্রাণীকে একটি পর্বে এবং বহুকোষী প্রাণীদের নয়টি পর্বে ভাগ করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url