তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য | তেজস্ক্রিয়তার প্রকারভেদ | তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার

তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে?

কোনো মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় কণা বা রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।

তেজস্ক্রিয়তা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কণা বা শক্তির বিকিরণ নির্গত হয়। এই বিকিরণগুলির ভেদন ক্ষমতা বেশি, তাই এগুলি জীবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

তেজস্ক্রিয়তার প্রকারভেদ

তেজস্ক্রিয়তাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

আলফা বিকিরণ: আলফা বিকিরণ হলো হিলিয়ন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সমতুল্য একটি কণা। আলফা কণার গতিবেগ কম, তাই এগুলির ভেদন ক্ষমতা কম।

বিটা বিকিরণ: বিটা বিকিরণ হলো একটি ইলেকট্রন বা প্রোটনের সমতুল্য একটি কণা। বিটা কণার গতিবেগ বেশি, তাই এগুলির ভেদন ক্ষমতা বেশি।

গামা বিকিরণ: গামা বিকিরণ হলো শক্তিশালী তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ। গামা রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

তেজস্ক্রিয়তার ছয়টি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল:

  • তেজস্ক্রিয়তা হল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু পদার্থ, যাকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলা হয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ নিউক্লিয়াস থেকে কণা এবং শক্তি নির্গত করে।
  • তেজস্ক্রিয়তা একটি পরিবর্তনশীল ঘটনা। তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রতিটি পরমাণু নির্দিষ্ট হারে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত করে। এই হারটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রকার এবং আইসোটোপের উপর নির্ভর করে।
  • তেজস্ক্রিয়তা একটি নিয়মিত ঘটনা। তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রতিটি পরমাণু একই হারে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত করে। এই নিয়মিততা তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
  • তেজস্ক্রিয়তা একটি বিকিরণ প্রক্রিয়া। তেজস্ক্রিয় পদার্থ যে কণা এবং শক্তি নির্গত করে তা বিকিরণ। এই বিকিরণগুলি মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • তেজস্ক্রিয়তা একটি অদৃশ্য ঘটনা। তেজস্ক্রিয় বিকিরণগুলিকে দেখা যায় না, শোনা যায় না বা অনুভূত করা যায় না। এগুলি সনাক্ত করার জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।
  • তেজস্ক্রিয়তা একটি দীর্ঘমেয়াদী ঘটনা। তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নির্গত করার ক্ষমতা অনেক বছর ধরে থাকতে পারে।

তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার

তেজস্ক্রিয়তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, যেমন:

  • তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে ঔষধ তৈরি করা হয়।
  • তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করে জীবাশ্ম জ্বালানির বয়স নির্ণয় করা হয়।
  • তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করে টিউমার ধ্বংস করা হয়।
  • তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি

তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে:

  • ক্যান্সার
  • জেনেটিক মিউটেশন
  • জন্মগত ত্রুটি

তেজস্ক্রিয়তা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  • তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে দূরে থাকা
  • তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে এলে তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলা
  • তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url