কপিরাইট কাকে বলে? কপিরাইট আইন কি? কপিরাইট আইনের উদ্দেশ্য

কপিরাইট কাকে বলে?

কপিরাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ যা রক্ষা করার ব্যবস্থা না করলে এর স্বত্বাধিকারী বা মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কপিরাইটের মাধ্যমে সাহিত্য, শিল্প ও অন্যান্য শিল্পকলা সৃষ্টিকারীকে তার সৃষ্ট মেধাসম্পদ ব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করা হয়। গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা জাতীয় সাহিত্যকর্ম, চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, যন্ত্র সংঙ্গীত, ভাস্কর্য, স্থাপত্যকলা কপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়। 

বর্তমানে কম্পিউটার সফটওয়্যারও কপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যখন কোনো পুস্তকের লেখক এবং প্রকাশকের মধ্যে বইটি মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তি হয় একেই কপিরাইট চুক্তিপত্র বলা হয়। চুক্তিপত্রে সময়, রয়েলটির পরিমাণ প্রভৃতি উল্লেখ থাকে। চুক্তিপত্র রেজিষ্ট্রি করা থাকলে চুক্তি ভঙ্গের জন্য লেখক কোর্টে প্রতিকার চাইতে পারে।

কপিরাইট আইন কি?

কপিরাইট আইন হলো একটি আইন যা মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মালিকানা বা সত্ত্বাধিকারী নিশ্চিত করে। এই আইনের অধীনে, মৌলিক সৃষ্টিকর্মের সৃষ্টিকর্তা বা তার উত্তরাধিকারী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেই সৃষ্টিকর্মের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করেন। এই অধিকারের মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিকর্মটিকে প্রকাশ, অনুবাদ, অনুলিপি, সম্পাদনা, পরিবেশনা, প্রদর্শন, বিতরণ এবং অন্যদের দ্বারা অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করা।

কপিরাইট আইনের উদ্দেশ্য

কপিরাইট আইনের উদ্দেশ্যগুলোকে নিম্নরূপ বিভক্ত করা যেতে পারে:

  • সৃজনশীলতা উৎসাহিত করা: কপিরাইট আইন সৃজনশীল ব্যক্তিদের তাদের কাজের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। এটি তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার এবং আরও সৃজনশীল কাজ তৈরি করার উৎসাহ দেয়।
  • সৃজনশীল কাজের মূল্যবোধ নিশ্চিত করা: কপিরাইট আইন সৃজনশীল কাজের মালিকদের তাদের কাজের উপর একচেটিয়া অধিকার দেয়। এটি সৃজনশীল কাজের মূল্যবোধ নিশ্চিত করে এবং সৃজনশীল ব্যক্তিদের তাদের কাজের জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।
  • সাংস্কৃতিক বিকাশের প্রচার: কপিরাইট আইন সৃজনশীল কাজের প্রচার ও বিতরণকে উৎসাহিত করে। এটি সাংস্কৃতিক বিকাশের প্রচার করে এবং জনগণের মধ্যে সৃজনশীল কাজের প্রসার ঘটায়।

কপিরাইট আইনের মাধ্যমে সৃজনশীল ব্যক্তিরা তাদের কাজের জন্য উপযুক্ত সম্মান ও স্বীকৃতি পান। এটি সৃজনশীল কাজের বিকাশ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কপিরাইট আইনের আওতায় যেসব সৃষ্টিকর্ম আসতে পারে

  • সাহিত্যকর্ম, যেমন বই, কবিতা, গল্প, নাটক, সিনেমা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, গান, ইত্যাদি
  • শিল্পকর্ম, যেমন চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, নকশা, ইত্যাদি
  • সঙ্গীতকর্ম, যেমন গান, সুর, ইত্যাদি
  • চলচ্চিত্র
  • কম্পিউটার প্রোগ্রাম
  • তথ্য

কপিরাইট আইনের অধীনে, সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্মের উপর নির্দিষ্ট অধিকার ভোগ করেন। এই অধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • প্রকাশের অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম প্রকাশের অধিকার রাখেন।
  • অনুলিপির অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম অনুলিপি করার অধিকার রাখেন।
  • অনুবাদের অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম অনুবাদ করার অধিকার রাখেন।
  • সম্পাদনার অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম সম্পাদনা করার অধিকার রাখেন।
  • পরিবেশনার অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম পরিবেশনা করার অধিকার রাখেন।
  • প্রদর্শনের অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শনের অধিকার রাখেন।
  • বিতরণের অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম বিতরণ করার অধিকার রাখেন।
  • অনুমোদনের অধিকার: সৃষ্টিকর্মের মালিক তার সৃষ্টিকর্ম অন্যদের দ্বারা অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করার অধিকার রাখেন।

কপিরাইট আইনের অধীনে, সৃষ্টিকর্মের মালিক তার অধিকার রক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। যদি কেউ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে সৃষ্টিকর্মের মালিক তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইনের অধীনে, সৃষ্টিকর্মের মালিকের অধিকার ৬০ বছর পর্যন্ত বহাল থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url