মার্কেটিং কাকে বলে? মার্কেটিং এর জনক, প্রকারভেদ, মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য

মার্কেটিং কাকে বলে?

মার্কেটিং হ'ল ক্রিয়াকলাপ, সংস্থার সেট এবং বৃহত্তর গ্রাহক, ক্লায়েন্ট, অংশীদার এবং সমাজের জন্য মূল্য রয়েছে এমন অফার তৈরি, যোগাযোগ, বিতরণ এবং আদান প্রদানের প্রক্রিয়া।

মার্কেটিং এর জনক কে?

মার্কেটিং এর জনক হিসেবে ফিলিপ কোটলারকে বিবেচনা করা হয়। তিনি মার্কেটিং এর একটি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব প্রদান করেন এবং মার্কেটিং এর একটি আধুনিক সংজ্ঞা প্রদান করেন। তিনি মার্কেটিংকে "মানুষের চাহিদা এবং চাহিদা পূরণের মাধ্যমে লাভ অর্জনের প্রক্রিয়া" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।

ফিলিপ কোটলার ১৯৩১ সালে পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিংয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি মার্কেটিংয়ের উপর ১০০টিরও বেশি বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখা বইগুলো বিশ্বব্যাপী মার্কেটিং শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

ফিলিপ কোটলার মার্কেটিং এর বিভিন্ন ধারণা ও কৌশলগুলোকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি মার্কেটিং এর ৪P তত্ত্ব, মার্কেটিং মিশ্রণ, মার্কেটিং পরিকল্পনা, মার্কেটিং গবেষণা, মার্কেটিং যোগাযোগ, মার্কেটিং ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ধারণাগুলোকে জনপ্রিয় করেন।

ফিলিপ কোটলারের অবদানের জন্য তাকে মার্কেটিং এর জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশের মার্কেটিং এর জনক কে?

বাংলাদেশের মার্কেটিং এর জনক হিসেবে ড. মোহাম্মদ শাহ আলমকে বিবেচনা করা হয়। তিনি একজন বিশিষ্ট মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ, লেখক, এবং শিক্ষাবিদ। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মার্কেটিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম অধ্যাপক।

ড. শাহ আলম ১৯৪৭ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১৯৭৫ সালে মার্কেটিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. শাহ আলম ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে মার্কেটিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ড. শাহ আলম মার্কেটিংয়ের উপর ১০টিরও বেশি বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখা বইগুলো বাংলাদেশের মার্কেটিং শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ধারণা ও কৌশলগুলোকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ড. শাহ আলমের অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের মার্কেটিং এর জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

মার্কেটিং এর প্রকারভেদ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত:

  • পারম্পরিক মার্কেটিং
  • ডিজিটাল মার্কেটিং

পারম্পরিক মার্কেটিং

পারম্পরিক মার্কেটিং বলতে এমন মার্কেটিং পদ্ধতিকে বোঝায় যা অফলাইন মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ ধরনের মার্কেটিংয়ে বিভিন্ন ধরনের বাহ্যিক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়, যেমন:

  • প্রিন্ট মিডিয়া: সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ক্যালেন্ডার, লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি।
  • ইলেকট্রনিক মিডিয়া: টেলিভিশন, রেডিও, সিনেমা ইত্যাদি।
  • আউটডোর মিডিয়া: বিলবোর্ড, ব্র্যান্ডেড ভেহিকল, পম্পুন ইত্যাদি।
  • পারসোনাল সেলস: সরাসরি ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা।

ডিজিটাল মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে এমন মার্কেটিং পদ্ধতিকে বোঝায় যা অনলাইন মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ ধরনের মার্কেটিংয়ে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা হয়, যেমন:

  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM): সার্চ ইঞ্জিনে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন প্রচার করা।
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): সার্চ ইঞ্জিন ফলাফলের প্রথম পাতায় ওয়েবসাইটকে স্থান দেওয়ার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া।
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM): সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে টার্গেটেড কন্টেন্ট প্রচার করা।
  • ইমেল মার্কেটিং: ইমেলের মাধ্যমে টার্গেটেড গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করা।
  • কনটেন্ট মার্কেটিং: মূল্যবান এবং তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করে গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা।
  • ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং: ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রচার করা।

পারম্পরিক মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য

পারম্পরিক মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলো হলো:

  • মাধ্যম: পারম্পরিক মার্কেটিং অফলাইন মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইন মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
  • টার্গেটিং: পারম্পরিক মার্কেটিংয়ে সাধারণত টার্গেটিং করার সুযোগ কম থাকে, যেখানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে টার্গেটিং করার সুযোগ অনেক বেশি থাকে।
  • পরিমাপ: পারম্পরিক মার্কেটিংয়ের কার্যকারিতা পরিমাপ করা কঠিন, যেখানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কার্যকারিতা পরিমাপ করা সহজ।

কোন ধরনের মার্কেটিং ভালো?

কোন ধরনের মার্কেটিং ভালো তা নির্ভর করে ব্যবসার ধরন, টার্গেট মার্কেট, এবং মার্কেটিং বাজেটের উপর। সাধারণত, ছোট ব্যবসার জন্য পারম্পরিক মার্কেটিং ভালো, যেখানে বড় ব্যবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং ভালো। তবে, অধিকাংশ ব্যবসার জন্য পারম্পরিক মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং উভয়েরই প্রয়োজন হয়।

মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য

মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

  • মানুষের চাহিদা পূরণ: মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের চাহিদা পূরণ করা। মার্কেটাররা বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করে মানুষের চাহিদা এবং চাহিদা পূরণের উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে পারে।
  • লাভ অর্জন: মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসা লাভ অর্জন করতে পারে। মার্কেটাররা সঠিক মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার বিক্রি বাড়িয়ে ব্যবসার লাভ বৃদ্ধি করতে পারে।
  • ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য অর্জন: মার্কেটিং ব্যবসার অন্যান্য উদ্দেশ্য অর্জনেও সহায়তা করে। যেমন, ব্যবসার পরিচিতি বাড়ানো, বাজার দখল বৃদ্ধি করা, ইত্যাদি।
  • ব্যবসায়িক কার্যক্রম সমন্বয়: মার্কেটিং ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রমকে সমন্বয় করে। যেমন, উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয়, ইত্যাদি।
  • সমাজের কল্যাণ: মার্কেটিং সমাজের কল্যাণেও অবদান রাখতে পারে। যেমন, নতুন পণ্য বা সেবা উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, ইত্যাদি।
  • প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা: মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। মার্কেটাররা সঠিক মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারে।
  • পরিবর্তনশীল: মার্কেটিং একটি পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। ব্যবসার পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে মার্কেটিং কৌশলও পরিবর্তন করতে হয়।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো মার্কেটিংকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম হিসেবে তুলে ধরে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url