দুর্যোগ কাকে বলে? দুর্যোগ কত প্রকার ও কি কি? দুর্যোগ মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?

দুর্যোগ কাকে বলে?

ইংরেজি Disaster কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ দুর্যোগ। সাধারণভাবে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট যেসব ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারাকে ব্যাহত করে, মানুষের সম্পদ ও পরিবেশে এমনভাবে ক্ষতিসাধন করে যে, আক্রান্ত জীবনগোষ্ঠীকে জাতীয় জীবন ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হয়, তাকে দুর্যোগ বলে।

দুর্যোগ হলো এমন একটি ঘটনা যা মানুষের জীবন, সম্পত্তি এবং পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। দুর্যোগগুলি প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি হলো এমন ঘটনা যা প্রকৃতির কারণে ঘটে, যেমন ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, খরা ইত্যাদি। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগগুলি হলো এমন ঘটনা যা মানুষের কার্যকলাপের কারণে ঘটে, যেমন যুদ্ধ, বিস্ফোরণ, রাসায়নিক দুর্ঘটনা ইত্যাদি।

দুর্যোগগুলির প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক হতে পারে। এগুলি মানুষের মৃত্যু, আহত হওয়া, সম্পত্তির ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি ইত্যাদির কারণ হতে পারে। দুর্যোগগুলি সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাকেও ব্যাহত করতে পারে।

দুর্যোগ কত প্রকার ও কি কি?

দুর্যোগগুলিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়: প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি হলো এমন ঘটনা যা প্রকৃতির কারণে ঘটে, যেমন ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, খরা ইত্যাদি। এগুলি প্রকৃতির শক্তির কারণে ঘটে এবং মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে:

ভূমিকম্প: ভূপৃষ্ঠের নীচে শিলা বা খনিজ পদার্থের গঠন বা বিন্যাস পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের কম্পন বা তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এই কম্পন বা তরঙ্গের ফলে ভূমিকম্প হয়।

বন্যা: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, হিমবাহ গলে যাওয়া বা নদীর গর্তে ভাঙন পড়ার ফলে নদীর পানি উপচে পড়ে ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে বন্যা বলা হয়।

ঘূর্ণিঝড়: সমুদ্রের উপর উচ্চচাপের কেন্দ্র থেকে নিম্নচাপের কেন্দ্রের দিকে বাতাসের তীব্র বেগে ঘূর্ণায়মান গতিতে ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এই ঝড়কে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

দাবানল: জঙ্গলে বা শুষ্ক অঞ্চলে গাছপালা ও বনজঙ্গল পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে দাবানল বলা হয়।

খরা: দীর্ঘ সময় ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে ভূমিতে জলের অভাব দেখা দেয়। এই অবস্থাকে খরা বলা হয়।

মানুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ

মানুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগগুলি হলো এমন ঘটনা যা মানুষের কার্যকলাপের কারণে ঘটে, যেমন যুদ্ধ, বিস্ফোরণ, রাসায়নিক দুর্ঘটনা ইত্যাদি। এগুলি মানুষের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কর্মকাণ্ডের কারণে ঘটে।

মানুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে:

যুদ্ধ: দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষকে যুদ্ধ বলা হয়। যুদ্ধের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে।

বিস্ফোরণ: কোনো বিস্ফোরক পদার্থের বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগকে বিস্ফোরণ বলা হয়। বিস্ফোরণের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে।

রাসায়নিক দুর্ঘটনা: রাসায়নিক কারখানা, তেলবাহী জাহাজ বা রাসায়নিক দ্রব্য পরিবহনকারী ট্রেনের দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট দুর্যোগকে রাসায়নিক দুর্ঘটনা বলা হয়। রাসায়নিক দুর্ঘটনার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে।

দুর্যোগগুলির প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক হতে পারে। এগুলি মানুষের মৃত্যু, আহত হওয়া, সম্পত্তির ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি ইত্যাদির কারণ হতে পারে। দুর্যোগগুলি সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাকেও ব্যাহত করতে পারে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?

দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দুর্যোগ মোকাবেলার প্রথম ধাপ। মানুষকে দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে হলে শিক্ষা, প্রচার এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করা: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা হলো এমন একটি পরিকল্পনা যা দুর্যোগের আগে, দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পরে কী করা হবে তা নির্ধারণ করে। এই পরিকল্পনাটি তৈরি করতে হলে সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ প্রদান: দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণটি মানুষকে দুর্যোগে কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে নিজের এবং অন্যদের জীবন বাঁচাবে তা শিখতে সাহায্য করবে।

দুর্যোগকালীন সহায়তা প্রদান: দুর্যোগের পরে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ। এই সহায়তাটি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যক্তিগতভাবে আমরাও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি। এর মধ্যে রয়েছে:

  • দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করা
  • দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ নেওয়া
  • দুর্যোগকালীন জন্য প্রস্তুতি নেওয়া

দুর্যোগ মোকাবেলায় সকলের অংশগ্রহণই জরুরি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url