বায়ু দূষণ কাকে বলে? বায়ু দূষণের কারণ | প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

বায়ু দূষণ কাকে বলে?

অপরিকল্পিতভাবে বাসগৃহ নির্মাণ, শিল্পকারখানা স্থাপন, ভাটায় ইট পোড়ানো ইত্যাদি কারণে বায়ুমণ্ডল দূষিত হয় এবং একে বায়ু দূষণ বলে।

বায়ুর স্বাভাবিক উপাদানের পরিবর্তন হলে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বায়ুর স্বাভাবিক উপাদান পরিবর্তন হওয়াকে বায়ু দূষণ বলে।

বায়ু দূষণের কারণ

বায়ু দূষণের অনেক কারণ রয়েছে। যেমন -

১) যানবাহন ও কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড বা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ও কালো ধোঁয়া যা সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করলে বায়ু দূষিত হয়।

২) জীবাণুমুক্ত ধুলিকণা বায়ুতে ভেসে বেড়ায় যা বায়ুকে দূষিত করে।

৩) অনেক কলকারখানা (যেমন: পাটকল, বস্ত্রকল, সিমেন্টের কারখানা ইত্যাদি) থেকে নির্গত ধূলিকণা বায়ু দূষণ ঘটায়।

৪) বর্তমানকালে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ত্রিয় পদার্থ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শক্তি পরীক্ষায় নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তেজস্ক্রিয় পদার্থ এসব তেজস্ক্রিয় ভষ্মের কণাগুলি দ্বারা মানুষের বিভিন্ন মারাত্মক রোগ, দেহের বিকৃতি ইত্যাদি দেখা দিতেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ব্যবহৃত পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলাফল এখনও বর্তমান।

৫) ফসলের কীটপতঙ্গ, ছত্রাক দমনে রাসায়নিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে ডিডিটি (DDT), অ্যালড্রিন, ক্লোরোডেন, ডাইমেক্সন, ডায়াজিনন, ফুরাডান, বাসুডিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ সমস্ত কীটনাশক কৃষিক্ষেতে ছিটানোর ফলে বায়ু দূষিত হয়।

আরো পড়ুনঃ শিল্পোন্নয়নের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনটি?

বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

বায়ু দূষণের প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • স্বাস্থ্য সমস্যা: বায়ু দূষণ হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • পরিবেশগত ক্ষতি: বায়ু দূষণ উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের ক্ষতি করতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারে।
  • সম্পদ ক্ষতি: বায়ু দূষণ ভবন এবং অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি করতে পারে।

বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ

বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • যানবাহন দূষণ নিয়ন্ত্রণ: যানবাহন দূষণের প্রধান উৎস। যানবাহন দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার, দক্ষ ইঞ্জিন প্রযুক্তি প্রয়োগ, এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
  • শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ: শিল্প দূষণের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, পরিশোধন প্রযুক্তি প্রয়োগ, এবং শিল্প স্থাপনা পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন দূষণ নিয়ন্ত্রণ: বিদ্যুৎ উৎপাদন দূষণের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস। বিদ্যুৎ উৎপাদন দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার, এবং দক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • কৃষিকাজ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কৃষিকাজ দূষণের চতুর্থ বৃহত্তম উৎস। কৃষিকাজ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, সার এবং কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, এবং জমি ব্যবহার পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
  • প্রাকৃতিক উৎস দূষণ নিয়ন্ত্রণ: প্রাকৃতিক উৎস দূষণের প্রভাবগুলি কমাতে, বনায়ন এবং জলাভূমি সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে, আমরা নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে বায়ু দূষণ কমাতে সহায়তা করতে পারি:

  • যানবাহন ব্যবহার কমানো: যানবাহন ব্যবহার কমিয়ে, আমরা বায়ু দূষণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়তা করতে পারি।
  • বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা: বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে, আমরা বায়ু দূষণ কমাতে এবং আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি।
  • সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা: সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ু দূষণ কমাতে সহায়তা করতে পারি।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি করা: বায়ু দূষণের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, আমরা বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারি।

বায়ু দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা যা আমাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার, শিল্প, এবং জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ কার্বন দূষণ কাকে বলে? কার্বন দূষণের প্রধান উৎস | কার্বন দূষণের প্রভাব

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url