অনিয়ত পুষ্পমঞ্জুরী কাকে বলে?

অনিয়ত পুষ্পমঞ্জুরী কাকে বলে?

সপুষ্পক উদ্ভিদের ছোট একটি শাখায় ফুলগুলো একটি বিশেষ নিয়মে সজ্জিত থাকে। ফুলসহ এই শাখাকে পুষ্পমঞ্জুরী বলে। পুষ্পমঞ্জুরীর ফুলগুলো বহনকারী দণ্ডকে বলা হয় মঞ্জুরীদণ্ড। পুষ্পমঞ্জুরীদণ্ডের বৃদ্ধি অসীম হলে তাকে অনিয়ত পুষ্পমঞ্জরী বলে। অনিয়ত পুষ্পমঞ্জরীদণ্ডের শীর্ষদেশ একটি মাত্র ফুলে পরিসমাপ্ত না হয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেমন- সরিষার পুষ্পমঞ্জুরী।

অনিয়ত পুষ্পমঞ্জুরীর প্রকারভেদ

ক) অনির্দিষ্ট বা রেসিমঃ এক্ষেত্রে পুষ্পদণ্ড বা মঞ্জুরীদন্ড লম্বা ও অনির্দিষ্টভাবে বেড়ে যায় এবং সবৃন্তক পুষ্পগুলো অগ্রোন্মুখভাবে ফোটে। প্রতিটি পুষ্পের বৃন্ত প্রায় সমান দৈর্ঘ্যযুক্ত হয়। উদাহরণঃ সরষে, মূলা, অতসী ইত্যাদি।

খ) সমভূম বা করিম্বঃ অনির্দিষ্টভাবে বাড়তে থাকা পুষ্পদণ্ড বা মঞ্জরীদণ্ডের উপর উৎপন্ন পুষ্পের বৃন্তগুলো অসমান হয়। নীচের দিকের পুষ্পগুলোর বৃন্ত উপরের পুষ্পগুলোর বৃন্তের চেয়ে অনেক বেশি লম্বা হয় ফলে পুষ্পগুলো প্রায় একই তলে অবস্থান করে এবং অভিকেন্দ্রিকভাবে ফোটে। উদাহরণ: কালকাসুন্দা।

গ) মঞ্জরী বা স্পাইকঃ এক্ষেত্রে পুষ্পদণ্ড বা মঞ্জরীদণ্ডটি রেসিমের মতো লম্বা এবং অনির্দিষ্টভাবে বেড়ে যায় কিন্তু পুষ্পগুলো অবৃন্তক হয়। উদাহরণ - আপাং, নীলকান্ত ইত্যাদি।

ঘ) চমসামঞ্জরী বা স্প্যাডিকসঃ এই প্রকার পুষ্পমঞ্জরী সামান্য রূপান্তর দেখা যায়। এক্ষেত্রে পুষ্পদণ্ডটি অপেক্ষাকৃত রসালো ও মোটা হয় এবং এক বা একাধিক, বিশেষ ধরনের, বৃহদাকার, চমসা নামক মঞ্জরীপত্র দিয়ে আবৃত থাকে। এক্ষেত্রে পুষ্পগুলো একলিঙ্গ বা ক্লীব ধরনের হয়। পুষ্পদণ্ডের উপরের দিকে পুংপুষ্প এবং নীচের দিকে স্ত্রী-পুষ্প সজ্জিত থাকে। পুং ও স্ত্রী পুষ্পের মধ্যবর্তী স্থানে ক্লীব পুষ্পগুলো অবস্থান করে। পুষ্পদণ্ডের অগ্রভাগ পুষ্পবিহীন থাকে যাকে উদগত উপাঙ্গ বা অ্যাপেনডিকস বলে। উদাহরণঃ কচু।

ঙ) অ্যামেন্টাম বা ক্যাটকিনঃ এটি একলিঙ্গ পুষ্পবিশিষ্ট একপ্রকার রূপান্তরিত মঞ্জরী মাত্র। এক্ষেত্রে পুষ্পদণ্ড বা মঞ্জরীদন্ডটি সরু ও খুব দুর্বল হয় ফলে ঋজু বা খাড়া হয়ে থাকতে পারে না এবং নীচের দিকে ঝুলে পড়ে। নিষেকের পর পরিণত অবস্থায় ক্যাটকিন ঝরে পড়ে। উদাহরণঃ মুক্তোঝুরি, হ্যাজেল।

চ) স্ট্রোবাইলঃ এক্ষেত্রে মঞ্জরী বা স্পাইক পুষ্পবিন্যাসের সামান্য রূপান্তর ঘটেছে। এখানে পুষ্পদন্ড বা মঞ্জরীদন্ডের উপর অবস্থিত শুল্কপত্র বা মঞ্জরীপত্রের কক্ষে পুষ্প উৎপন্ন হয়। উদাহরণঃ হপ।

ছ) অনুমঞ্জরী বা স্পাইকলেট বা লকুস্টাঃ এই ধরনের পুষ্পবিন্যাস বিশেষ করে গ্র্যামিনী (পোয়েসী) গ্রোত্রের উদ্ভিদে দেখা যায়। একটি অনুমঞ্জরীতে এক বা একাধিক পুষ্প উৎপন্ন হয়। সম্পূর্ণ অনুমঞ্জরীর নীচের দিকে সাধারণত দুটি মঞ্জরীপত্র বা গ্লুম থাকে যার উপরের দিকে অবস্থিত প্রতিটি পুষ্প লেম্মা ও পেলিয়া নামক মঞ্জরীপত্র ও মঞ্জরীপত্রিকার কক্ষে উৎপন্ন হয়। উদাহরণঃ ধান, গম ইত্যাদি।

জ) ছত্রমঞ্জরীঃ এক্ষেত্রে পুষ্পদন্ড বা মঞ্জরীদন্ডটি অত্যন্ত সঙ্কুচিত হয় এবং মঞ্জরীদন্ডের অগ্রভাগ থেকে প্রায় সমান দৈর্ঘ্যের বৃন্তযুক্ত পুষ্প অরীয়ভাবে সজ্জিত থাকে, ফলে সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসটি ছাতার মত দেখায়। উদাহরণঃ থানকুনি।

ঝ) মুন্ড বা ক্যাপিচ্যুলাম বা অ্যান্থোডিয়ামঃ এক্ষেত্রে প্রধান অক্ষটি দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি না পেয়ে স্থূল, স্ফীত ও প্রসারিত হয়ে পুষ্পাধারে পরিণত হয়। পুষ্পাধারের উপর অসংখ্য অবৃন্তক পুষ্প যাদের পুষ্পিকা বলে, প্রান্ত থেকে ক্রমে কেন্দ্রের দিকে ফুটতে থাকে। পুষ্পাধারের নিচে পুষ্পাধারকে আবৃত করে কতকগুলো ছোট ছোট মঞ্জরীপত্র চক্রাকারে সজ্জিত থাকে। একে মঞ্জরীপত্রাবরণ বলে। এই ধরনের পুষ্পবিন্যাসে বাইরের দিকে অবস্থিত পুষ্পগুলোকে প্রান্তপুষ্পিকা এবং কেন্দ্রের পুষ্পিকাগুলোকে মধ্যপুষ্পিকা বলে। উদাহরণ: সূর্যমুখী।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url