মনোবল কি/কাকে বলে | উপাদান | গুরুত্ব | Morale
মনোবল হলো দলীয় চরিত্র। সংগঠনে মনোবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় সংহতি না থাকলে সংগঠন উন্নতি লাভ করতে পারে না। মনোবলের সংজ্ঞা, উপাদান, মনোবল উন্নত করার উপায় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মনোবল কাকে বলে? Morale
আভিধানিক অর্ধে মনোবল হচ্ছে কোন ব্যক্তি বা দলের আত্মবিশ্বাস, স্বতঃস্ফূর্ততা, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভাব ইত্যাদি থাকার পরিমাণ যা কোন এক নির্দিষ্ট সময় থাকে। তবে প্রধানতঃ মনোবল বলতে একটি দলগত বিশ্বাস, আস্থা, স্বতঃস্ফূর্ততা ইত্যাদি বোঝায়।
আরো পড়ুনঃ স্মৃতি কাকে বলে? স্মৃতির উপাদান, ধৃতি, পুনরুদ্রেক, প্রত্যভিজ্ঞা, স্থান - কাল নির্দেশ
মনোবল একটি মানসিক অবস্থা এবং সে কারণে এটি একটি মনস্তাত্বিক বিষয়। এটি ব্যক্তির মানসিক শক্তি, দৃঢ়তা ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। মনোবল ধারণাটি নানা রকমের ব্যাখ্যা আছে। এই ব্যাখ্যা তিনটি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত। এই মতবাদসমূহ হলো ধ্রুপদি মতবাদ, মনস্তাত্বিক মতবাদ ও সামাজিক মতবাদ।
![মনোবল কাকে বলে মনোবল কাকে বলে](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhwZp3VU6vALeVxhJXXfXWsjzS356z7swhbnQ_udkqPuc9E6_8_UDiKjayaZ3gmSEzz8eTG1fh5JXZEk8CH8PRJKiUvSLIki5sb4ruu6J8f79sP2PsgbMFDnwDQYYuOKfK6ufzLSXTtB8cGJ135PQoiSP9JkFKG1X-QrDccW_cJTDyK_X6IG8qNnX-IYuCV/s16000-rw/%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%B2%20%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87%20%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87.webp)
ধ্রুপদি মতবাদে মনোবলকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পরিপূরণ করার প্রতি ব্যক্তির সন্তুষ্টির অনুভূতি হিসেবে বলা হয়েছে। অন্যদিকে মনস্তাত্বিক মতবাদে মনে করা হয় যে, মানুষের মনস্তাত্বিক চাহিদার পরিতৃপ্তির প্রকাশ হলো মনোবল। তবে সামাজিক মতবাদে মনোভাবকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের দলীয় স্পৃহা ও সংহতি হিসেবে বলা হয়েছে।
হ্যারেল বলেন, মনোবল হলো একটি সাধারণ প্রচেষ্টায় সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করার একটা আত্মবিশ্বাসী উদ্দীপনা বা তেজ।
অলপোর্ট বলেন, মনোবল হলো একটি দলগত প্রচেষ্টায় ব্যক্তিক মনোভাব।
লাফটন এর মতে, মনোবল হলো একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একদল লোকের অটল ও ধারাবাহিকভাবে সম্মিলিত কর্মসম্পাদনের সামর্থ্য।
পরিশেষে বলা যায়, মনোবল হলো দলবদ্ধ কর্মীবাহিনীর প্রতিষ্ঠানের সাধারণ লক্ষ্যের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, এর কার্য ও কার্য পরিবেশের উপর আস্থা রাখা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বোচ্চ দক্ষতার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করার একটি উদ্দীপনা ও মনোভাব।
মনোবলের উপাদানসমূহ
১) সাধারণ লক্ষ্যঃ মনোবল ধারণাটি আবশ্যকীয় উপাদান হলো কর্মীদের একটি সাধারণ লক্ষ্য থাকতে হবে, যেটি অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা গ্রহণ করার মনোভাব থাকতে হবে। এখানে ব্যক্তির নিজের কোন স্বতন্ত্র্য লক্ষ্য বিবেচনায় আসে না।
২) সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য উপায়ঃ মনোবল ধারণাটি অন্য একটি আবশ্যকীয় উপাদান হলো লক্ষ্য অর্জন করার যে উপায় নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেয়ার চেষ্টা করা হবে তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অবৈধ বা অনৈতিক উপায় বা পন্থা দিয়ে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত হলে তা মনোবল হবে না।
৩) ব্যক্তিক অঙ্গীকার ও মূল্যবোধঃ মনোবল একটা দলগত ধারণা। তবে এখানে প্রত্যেক ব্যক্তির সংগঠনের কাজের প্রতি ও সংগঠনের প্রতি ব্যক্তিগত অঙ্গীকার ও মূল্যবোধ থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিক অঙ্গীকার ও মূল্যবোধ সমন্বিত হয়েই মনোবলের জন্ম দেয়।
৪) প্রদত্ত কাজঃ মনোবল যে কাজ ও কার্য পরিবেশের প্রতি আস্থা রাখার কথা বলে তা সংগঠনে বিদ্যমান কাজ ও পরিবেশ হতে হবে। ব্যক্তির নিজের কাজ নিয়ে কোন মনোবল হয় না। সংগঠনের প্রদত্ত কাজ ও পরিবেশ নিয়েই সম্মিলিত মনোভাব-ই মনোবল।
৫) সহযোগিতাঃ মনোবলের অন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো পারস্পরিক সহযোগিতা করার প্রবল ইচ্ছা। পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা থেকেই ঐক্যমত গঠন হয় এবং মনোবলের উদ্ভব হয়।
মনোবলের গুরুত্ব (Importance of Morale)
শিল্প প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে ও প্রসারে কর্মীদের মনোবলের অবদান অনস্বীকার্য। সংগঠনের নানা ক্ষেত্রে কর্মীদের মনোবল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। নিচে মনোবল কেন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:
১) মনোবল সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনে কর্মীদের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। কেননা সমন্বিত একমুখী কার্য় তৎপরতা না হলে কোন প্রতিষ্ঠানই তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। মনোবল সেই সমন্বিত প্রচেষ্টার উৎস হিসেবে কাজ করে।
২) কর্মীদের মনোবল উচ্চ থাকলে প্রতিষ্ঠানের নেতিবাচক পরিণতি হয় না। কাজে অনুপস্থিত, শ্রমিক ঘূর্ণাবর্তন, ধর্মঘট, কর্মবিরতি, ক্ষতিকর কাজ, ঘন ঘন অভিযোগ ইত্যাদি কোন ঘটনা ঘটে না। প্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্ন ভাবে উৎপাদন চালাতে পারে।
৩) মনোবল সন্তোষজনক থাকলে কর্মীদের সোৎসাহে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য কাজ করে। কর্মীদের জন্য মনোবল নিজেই একটা প্রেষণামূলক তাড়না হিসেবে কাজ করে।
৪) মনোবল ইতিবাচক হলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক সৌহার্দ্যমূলক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ হয়। ফলে সাংগঠনিক মানবিক পরিবেশ সন্তোষজনক হয় ও কর্মীরা কার্যসন্তুষ্টি লাভ করে। কর্মীদের উচ্চ মনোবল সামগ্রিকভাবে সাংগঠনিক পারদর্শিতা বৃদ্ধি করে।
৫) মনোবল কর্মীদের সংগঠনের সাথে একাত্ম করে, কাজে জড়িত করে এবং সাংগঠনিক লক্ষ্য ও আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ করে। ফলে মনোবল প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ - মেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
আরো পড়ুনঃ মনোযোগ কাকে বলে? মনোযোগের বৈশিষ্ট্য