কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর

১। কার্বন দূষণ কাকে বলে?

উত্তরঃ কার্বন দূষণ বলতে বোঝায় পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য কার্বন-ভিত্তিক গ্রিনহাউস গ্যাসের অত্যধিক নির্গমন। জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন কয়লা, তেল, এবং প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ানো, বন উজাড়, এবং কৃষিকাজের কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে এই গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়।

কার্বন দূষণের প্রভাব

  • জলবায়ু পরিবর্তন: কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে তাপ ধরে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়-তুফান, খরা, এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
  • মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: কার্বন দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • জীববৈচিত্র্য হ্রাস: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক জীব প্রজাতি তাদের আবাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

কার্বন দূষণ কমাতে আমরা কী করতে পারি?

  • নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার: সৌর, বায়ু, এবং জলবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে পারি।
  • শক্তির দক্ষ ব্যবহার: বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি দক্ষভাবে ব্যবহার করে আমরা কার্বন নির্গমন কমাতে পারি।
  • বৃক্ষরোপণ: বনায়ন বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে।
  • পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন: পাবলিক পরিবহন ব্যবহার, সাইকেল চালানো, এবং হাঁটার মাধ্যমে আমরা যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন কমাতে পারি।

কার্বন দূষণ একটি বিরাট সমস্যা যা আমাদের গ্রহের জন্য এবং আমাদের সকলের জন্য হুমকি। আমাদের সকলকেই এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

২। পরিস্রাবণ কাকে বলে?

উত্তরঃ পরিস্রাবণ হলো একটি মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থ এবং তরল কে আলাদা করার পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় ফিল্টার মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। ফিল্টার মাধ্যমের গঠন এমন হয় যে শুধুমাত্র তরলই এর মধ্য দিয়ে যেতে পারে। কঠিন কণাগুলো ফিল্টার মাধ্যমের ছিদ্র দিয়ে যেতে পারে না এবং ফিল্টারের উপরে আটকে থাকে।

পরিস্রাবণের প্রয়োগ

  • চা ছেঁকে নেওয়া: চায়ের পাতা থেকে চায়ের পানি আলাদা করার জন্য।
  • বালি ছেঁকে নেওয়া: পানি থেকে বালি আলাদা করার জন্য।
  • রক্ত পরীক্ষা: রক্ত থেকে রক্তের কোষগুলো আলাদা করার জন্য।
  • বায়ু পরিশোধন: বায়ু থেকে ধুলোবালি এবং অন্যান্য কণা আলাদা করার জন্য।

পরিস্রাবণের বিভিন্ন পদ্ধতি

  • সাধারণ পরিস্রাবণ: কাপড়ের টুকরো, ফিল্টার পেপার, বা ছাঁকনি ব্যবহার করে।
  • চুম্বকীয় পরিস্রাবণ: চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে চুম্বকীয় কণা আলাদা করার জন্য।
  • অপকেন্দ্রিক পরিস্রাবণ: অপকেন্দ্র বল ব্যবহার করে কণা আলাদা করার জন্য।

পরিস্রাবণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

৩। এসিড বৃষ্টি কাকে বলে?

উত্তরঃ এসিড বৃষ্টি হলো বৃষ্টির জলের সাথে এসিডের মিশ্রণ। সাধারণত বৃষ্টির জলের পি.এইচ মান 5.6 এর কাছাকাছি থাকে। কিন্তু এসিড বৃষ্টির পি.এইচ মান 5.6 এর চেয়ে কম থাকে।

এসিড বৃষ্টির কারণ

  • জীবাশ্ম জ্বালানী দহন: কয়লা, তেল, এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত হয়।
  • বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • জ্বালানি দহন: যানবাহন, কারখানা, এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী।

এসিড বৃষ্টির প্রভাব

  • পরিবেশের উপর প্রভাব: এসিড বৃষ্টির ফলে বন, জলাশয়, এবং মাটির ক্ষতি হয়।
  • মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: এসিড বৃষ্টির ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অবকাঠামোর উপর প্রভাব: এসিড বৃষ্টির ফলে ভবন, সেতু, এবং অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৪। নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কাকে বলে?

উত্তরঃ নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হলো এমন অঙ্গ যা একসময় আমাদের পূর্বপুরুষদের দেহে সুগঠিত ও কার্যকর ছিল, কিন্তু পরবর্তী বংশধরদের দেহে গুরুত্বহীন, অগঠিত এবং অকার্যকর অবস্থায় রয়ে গেছে।

নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উদাহরণ:

  • অ্যাপেন্ডিক্স: বৃহদান্ত্রের সাথে যুক্ত।
  • জ্ঞানদন্ত: চোয়ালের পেছনের দিকে অবস্থিত।
  • কানের পেশী: কানের বাইরের অংশে অবস্থিত।
  • তৃতীয় চোখের পাতা: চোখের ভেতরের কোণে অবস্থিত।

৫। মনোমার কাকে বলে?

উত্তরঃ মনোমার হলো এমন একটি অণু যা পলিমারাইজেশন নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর পলিমার অণু তৈরি করতে পারে। একাধিক মনোমার একত্রিত হয়ে দীর্ঘ শিকল বা ত্রি-মাত্রিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে।

মনোমারের উদাহরণ:

  • ইথিন: পলিথিন তৈরি করে।
  • প্রোপিন: পলিপ্রোপিন তৈরি করে।
  • ভিনাইল ক্লোরাইড: পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC) তৈরি করে।
  • অ্যামাইনো অ্যাসিড: প্রোটিন তৈরি করে।

৬। প্লাজমা কাকে বলে?

উত্তরঃ প্লাজমা হলো আয়নিত গ্যাস এবং ইলেকট্রনের সমন্বয়ে গঠিত পদার্থের চতুর্থ অবস্থা। প্লাজমা কে আংশিকভাবে আয়নিত গ্যাসও বলা হয়।

প্লাজমার উদাহরণ:

  • বিদ্যুৎ বাতি: বিদ্যুৎ বাতির ভেতরে প্লাজমা থাকে।
  • নিয়ন সাইন: নিয়ন সাইনের ভেতরে প্লাজমা থাকে।
  • সূর্য: সূর্য প্লাজমা দিয়ে তৈরি।
  • তড়িৎ: বজ্রপাতের সময় তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ প্লাজমা।

প্লাজমার ব্যবহার:

  • প্লাজমা টিভি: প্লাজমা টিভিতে প্লাজমা ব্যবহার করা হয়।
  • প্লাজমা কাটার: ধাতু কাটার জন্য প্লাজমা ব্যবহার করা হয়।
  • প্লাজমা লেজার: প্লাজমা লেজারে প্লাজমা ব্যবহার করা হয়।
  • অর্ধপরিবাহী প্রক্রিয়াকরণ: অর্ধপরিবাহী তৈরির জন্য প্লাজমা ব্যবহার করা হয়।

৭। রক্তচাপ কাকে বলে?

উত্তরঃ রক্তচাপ হল ধমনীর দেয়ালে রক্ত প্রবাহের ফলে প্রয়োগ করা বল। এটি মিলিমিটার পারদ (mmHg) এককে পরিমাপ করা হয়। রক্তচাপকে দুটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়:

  • সিস্টোলিক রক্তচাপ: হৃৎপিন্ডের  সংকোচন বা সিস্টোল অবস্থায় ধমনিগাত্রে রক্তচাপের মাত্রা সর্বাধিক থাকে। একে সিস্টোলিক চাপ বলে। 
  • ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ: হৃৎপিন্ডের প্রসারণ বা ডায়াস্টোল অবস্থায় রক্তচাপ সবচেয়ে কম থাকে। একে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। 

স্বাভাবিক রক্তচাপ হল 120/80 mmHg এর কম। উচ্চ রক্তচাপ হল 130/80 mmHg বা তার বেশি রক্তচাপ।

৮। তড়িৎ ক্ষমতা কাকে বলে?

উত্তরঃ তড়িৎ ক্ষমতা হলো বিদ্যুৎ প্রবাহের হার। এটি ওয়াট এককে পরিমাপ করা হয়।

তড়িৎ ক্ষমতা নির্ণয়ের সূত্র:

P = VI

যেখানে,

P = তড়িৎ ক্ষমতা (ওয়াট)

V = বিদ্যুৎ বিভব (ভোল্ট)

I = বিদ্যুৎ প্রবাহ (অ্যাম্পিয়ার)

তড়িৎ ক্ষমতার উদাহরণ:

  • 100 ওয়াটের বাল্ব 100 ওয়াট তড়িৎ ক্ষমতা ব্যবহার করে।
  • 1 কিলোওয়াট (kW) বিদ্যুৎ 1,000 ওয়াট তড়িৎ ক্ষমতা সমান।

৯। সঞ্চয় কাকে বলে?

উত্তরঃ সঞ্চয় বলতে বোঝায় বর্তমানে ব্যবহার না করে ভবিষ্যতের জন্য কিছু জিনিসপত্র বা অর্থ জমা করে রাখা।

সঞ্চয়ের ধরণ

  • আর্থিক সঞ্চয়: অর্থ বা সম্পদের ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য জমা করে রাখা।
  • শারীরিক সঞ্চয়: খাদ্য, জ্বালানি, বা অন্যান্য জিনিসপত্র ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য জমা করে রাখা।

সঞ্চয়ের গুরুত্ব

  • অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য প্রস্তুতি: ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিতে সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ।
  • লক্ষ্য অর্জন: ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ।
  • আর্থিক স্থিতিশীলতা: আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ।

১০। হরমোন কাকে বলে?

উত্তরঃ হরমোন হলো রাসায়নিক বার্তাবাহক যা দেহের বিভিন্ন অংশে তথ্য বহন করে। এগুলি বিশেষ কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয় এবং রক্ত ​​প্রবাহের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছায়। 

হরমোন বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • বৃদ্ধি ও বিকাশ: শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশে হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • বিপাক: হরমোন খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে এবং শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • প্রজনন: হরমোন প্রজনন ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মেজাজ: হরমোন মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • শক্তি: হরমোন শরীরের শক্তির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url