সংকরায়ন কাকে বলে? রসায়ন
সংকরায়ন কাকে বলে?
রসায়নে, সংকরায়ন হল দুই বা ততোধিক ভিন্ন কিন্তু কাছাকাছি শক্তি সম্পন্ন অরবিটাল একত্রে মিলিত হয়ে, একই শক্তি সম্পন্ন সমান সংখ্যক নতুন অরবিটাল তৈরির প্রক্রিয়া। এই নতুন অরবিটালগুলিকে সংকর অরবিটাল বলা হয়। সংকরায়নের ফলে ইলেকট্রন বিন্যাস পরিবর্তিত হয় এবং এটি রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।
সংকরায়নের প্রকারভেদ
সংকরায়নের প্রকারভেদ নির্ভর করে সংকর অরবিটালগুলির সংখ্যার উপর। সংকর অরবিটালগুলির সংখ্যা যত বেশি হবে, সংকরায়ন তত জটিল হবে। সাধারণত, সংকরায়নের তিনটি প্রধান প্রকারভেদ দেখা যায়:
- sp-সংকরায়ন: এই ক্ষেত্রে একটি s-অরবিটাল এবং একটি p-অরবিটাল মিলিত হয়ে দুটি sp-সংকর অরবিটাল তৈরি হয়। এই ধরনের সংকরায়ন কার্বন পরমাণুতে দেখা যায়।
- sp2-সংকরায়ন: এই ক্ষেত্রে একটি s-অরবিটাল এবং দুটি p-অরবিটাল মিলিত হয়ে তিনটি sp2-সংকর অরবিটাল তৈরি হয়। এই ধরনের সংকরায়ন বোরন, কার্বন এবং নাইট্রোজেন পরমাণুতে দেখা যায়।
- sp3-সংকরায়ন: এই ক্ষেত্রে একটি s-অরবিটাল এবং তিনটি p-অরবিটাল মিলিত হয়ে চারটি sp3-সংকর অরবিটাল তৈরি হয়। এই ধরনের সংকরায়ন কার্বন, সিলিকন, জার্মেনিয়াম, টিন এবং অ্যান্টিমনি পরমাণুতে দেখা যায়।
সংকরায়নের প্রভাব
সংকরায়নের ফলে রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়। সংকরায়নের ফলে বন্ধনের দৈর্ঘ্য, শক্তি এবং কোণ পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণ:
মিথেন (CH4) অণুতে কার্বন পরমাণু sp3-সংকরায়িত। এই সংকরায়নের ফলে কার্বন পরমাণুর চারপাশে চারটি sp3-সংকর অরবিটাল গঠিত হয়। এই অরবিটালগুলি একটি নিয়মিত টেট্রহেড্রাল আকৃতিতে অবস্থিত। মিথেন অণুর চারটি C-H বন্ধন সমান দৈর্ঘ্য (109.5°) এবং শক্তি সম্পন্ন।
ইথেন (C2H6) অণুতে কার্বন পরমাণু sp2-সংকরায়িত। এই সংকরায়নের ফলে প্রতিটি কার্বন পরমাণুর চারপাশে তিনটি sp2-সংকর অরবিটাল গঠিত হয়। এই অরবিটালগুলি একটি সমতল ত্রিভুজ আকৃতিতে অবস্থিত। ইথেন অণুর দুটি C-H বন্ধন সমান দৈর্ঘ্য (120°) এবং শক্তি সম্পন্ন।
সংকরায়ন হল রসায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।