পরিযায়ী পাখি কাকে বলে? পরিযানের কারণ, গুরত্ব ও সংরক্ষণ

পরিযায়ী পাখি কাকে বলে?

নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু পাখি প্রতি বছর বা কয়েক বছর পর পর একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সময়ে কম করে দু’টি অঞ্চলের মধ্যে আসা-যাওয়া করে। জীবজন্তুর ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন এর সঠিক পরিভাষা হচ্ছে সাংবাৎসরিক পরিযান। যেসব প্রজাতির পাখি পরিযানে অংশ নেয়, তাদেরকে পরিযায়ী পাখি বলে।

পরিযায়ী পাখিদের পরিযানের কারণ

পরিযায়ী পাখিদের পরিযানের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • খাদ্যের প্রাপ্যতা: শীতকালে উত্তর গোলার্ধে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। তাই এ সময়ের পাখিরা উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যায়। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল, তাই খাদ্যের প্রাচুর্য থাকে।
  • আবহাওয়া: শীতকালে উত্তর গোলার্ধে আবহাওয়া খুব ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই এ সময়ের পাখিরা উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যায়। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল, তাই আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে।
  • প্রজনন: পরিযায়ী পাখিদের প্রজনন মৌসুম উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালে। তাই এ সময়ের পাখিরা উত্তরে ফিরে আসে।

পরিযায়ী পাখির উদাহরণ

পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে রয়েছে:

হাঁস, রাজহাঁস, তিতির, বনমোরগ, ঝুঁটিয়া, চিত্রা হাঁস, নীলশির, লালশির, ক্ষুদে গাংচিল, ঝাড়ুচাচা, কোকিল, চড়ুই, শালিক, টিয়ার, ময়না, তোতা ইত্যাদি।

পরিযায়ী পাখির গুরুত্ব

পরিযায়ী পাখিদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় নিধন করে, ফুল ও শস্যের পরাগায়ন ঘটায় এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

পরিযায়ী পাখিদের গুরুত্ব নিম্নরূপ:

  • কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় নিধন: পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। তাই তারা কৃষি ও পরিবেশের জন্য উপকারী।
  • পরাগায়ন: পরিযায়ী পাখিরা ফুল ও শস্যের পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য করে। ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • নৈসর্গিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি: পরিযায়ী পাখিদের আগমনে নৈসর্গিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তাদের গান ও কলকাকলিতে প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।

পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের আমাদের করণীয়

পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাদের আবাসস্থল রক্ষা, শিকার বন্ধ করা এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে করণীয়:

  • পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল রক্ষা করা।
  • পরিযায়ী পাখি শিকার বন্ধ করা।
  • পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • পরিযায়ী পাখি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।

পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের জন্য আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন, পরিযায়ী পাখিদের বিচরণক্ষেত্র রক্ষা করা, শিকার বন্ধ করা, ইলেকট্রিক তারে পাখিদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা ইত্যাদি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url