স্বত্ববিলোপ নীতি কাকে বলে?

স্বত্ববিলোপ নীতি কাকে বলে?

স্বত্ববিলোপ নীতি হল একটি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, যা মানুষের উপর মানুষের শোষণ থেকে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত হয়। এই নীতি অনুসারে, উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বন্টনপ্রণালীসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন জনগণ এবং এই উদ্দেশ্যে মালিকানা-ব্যবস্থা নিম্নরূপ হইবে:

রাষ্ট্রীয় মালিকানা: অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারী খাত সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের মালিকানা।

সমবায়ী মালিকানা: অর্থনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা।

ব্যক্তিগত মালিকানা: তবে এই মালিকানা হবে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত।

স্বত্ববিলোপ নীতির উদ্দেশ্য

স্বত্ববিলোপ নীতির উদ্দেশ্য হল:

  • মানুষের উপর মানুষের শোষণের অবসান ঘটানো।
  • অর্থনৈতিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
  • সামাজিক ন্যায় ও সুবিচার নিশ্চিত করা।
  • জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি অর্জন করা।

স্বত্ববিলোপ নীতির বাস্তবায়নে, রাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যেমন:

  • রাষ্ট্রায়ত্ত খাত বৃদ্ধি করা।
  • সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটানো।
  • ব্যক্তিগত মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করা।
  • অর্থনৈতিক সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা।

স্বত্ববিলোপ নীতি বাংলাদেশের সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এই নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ একটি সমাজতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে চায়।

স্বত্ববিলোপ নীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা

রাষ্ট্রীয় মালিকানা

রাষ্ট্রীয় মালিকানা হল স্বত্ববিলোপ নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই ব্যবস্থায়, অর্থনীতির প্রধান প্রধান ক্ষেত্র, যেমন- শিল্প, কৃষি, পরিবহন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির মালিকানা রাষ্ট্রের থাকে। রাষ্ট্র এই সম্পদগুলির সুষ্ঠু ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। যেমন:

  • এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি ত্বরান্বিত করে।
  • এটি অর্থনৈতিক সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
  • এটি জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে।

সমবায়ী মালিকানা

সমবায়ী মালিকানা হল স্বত্ববিলোপ নীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই ব্যবস্থায়, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা থাকে। সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলি হল এমন সংগঠন যেখানে মানুষ তাদের আর্থিক ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষার জন্য একত্রিত হয়।

সমবায়ী মালিকানা বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। যেমন:

  • এটি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
  • এটি অর্থনৈতিক সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
  • এটি জনগণের অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।

ব্যক্তিগত মালিকানা

স্বত্ববিলোপ নীতি ব্যক্তিগত মালিকানাকে পুরোপুরি বাতিল করে না। তবে, ব্যক্তিগত মালিকানাকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়। ব্যক্তিগত মালিকানা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহার ও ভোগের জন্য বজায় রাখা হয়। অর্থনীতির প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানাকে অনুৎসাহিত করা হয়।

ব্যক্তিগত মালিকানাকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করার কারণ হল:

  • এটি অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটাতে সহায়তা করে।
  • এটি অর্থনৈতিক সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
  • এটি জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url