রোবটিক্স কাকে বলে? রোবটিক্স-এর ব্যবহার

রোবটিক্স (Robotics) কাকে বলে?

রোবট শব্দটি দ্বারা এমন একধরনের যন্ত্রকে বোঝায় যেটি মানুষের কর্মকাণ্ডের অনুরূপ কর্মকাণ্ড করতে পারে। বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত যে বিষয়টি রোবটের ধারণা, নকশা, উৎপাদন, কার্যক্রম কিংবা ব্যবহার বাস্তবায়ন করতে পারে তাকে রোবটিক্স বলা হয়ে থাকে।

রোবটিক্স 

রোবট কথাটি বলা হলে যদিও সাধারণভাবে আমরা মানুষের আকৃতির একটি যন্ত্র কল্পনা করি, কিন্তু প্রকৃত রোবট তার কাজের উপর নির্ভর করে যে কোনো আকারের বা আকৃতির হতে পারে। আজ থেকে এক যুগ আগেও রোবটের মূল ব্যবহার গাড়ির ওয়েল্ডিং কিংবা স্ক্রু লাগানোর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রোবটের কার্যপরিধিও বেড়ে যেতে শুরু করেছ এবং এমন কোনো কাজ নেই যেখানে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে না।

রোবট গঠনে তিনটি নির্দিষ্ট বিশেষত্ব রয়েছে। 

সেগুলো হচ্ছেঃ

১) একটি রোবট যে নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য তৈরি হয়, তার উপর নির্ভর করে একটি বিশেষ যান্ত্রিক গঠন হয়ে থাকে।

২) রোবটের যান্ত্রিক কাজ করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকতে হয়।

৩) রোবটকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

রোবট শিল্প এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও এটি সাগরের গভীর থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত সব জায়গায়, যেখানে মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে কাজ করে যাচ্ছে।

রোবটিক্স-এর ব্যবহার

১) বিপজ্জনক কাজেঃ মানুষের পক্ষে যে সব কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন সমুদ্রের তলদেশে, যে কোনো অনুসন্ধানী কাজে, মাইন ইত্যাদি বিস্ফোরক দ্রব্য নিষ্ক্রিয়করণে, নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রে, খনির অভ্যন্তরের কোনো কাজে, নদী-সমুদ্রের নিচে টানেল নির্মাণ ইত্যাদি কার্যক্রমে রোবট ব্যবহৃত হয়।

২) শিল্প-কারখানায়ঃ শিল্পোৎপাদন কাজে, শিল্প-কারখানার ভারী বস্তু নড়াচড়া, প্যাকিং, সংযোজন, পরিবহন ইত্যাদি শ্রমসাধ্য কাজ ছাড়াও কম্পিউটার এইডেড কাজে রোবটিক্স এর ব্যবহার রয়েছে।

৩) সূক্ষাতিসূক্ষ্ম কাজেঃ মাইক্রোসার্কিটের উপাদান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষণ কাজ এবং ইলেকট্রনিক আইসি, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ইত্যাদির তৈরির জন্য রোবট ব্যবহৃত হয়।

৪) চিকিৎসা ক্ষেত্রেঃ সার্জারি, জীবাণুমুক্তকরণ, ওষুধ বিতরণ ইত্যাদি কাজে রোবট ব্যবহৃত হয়।

৫) সামরিক ক্ষেত্রেঃ বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্তকরণ, বোমা নিস্ক্রিয়করণ, যুদ্ধক্ষেত্রে এবং অন্যান্য মিলিটারি অপারেশনে রোবট ব্যবহৃত হয়।

৬) শিক্ষা ও বিনোদনেঃ শারীরিকভাবে অসুস্থ, পঙ্গু বা অটিস্টিক শিক্ষার্থীদেরকে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় রোবটের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। শিশুদের চিন্তাবিনোদনের ক্ষেত্রে খেলনা রোবট এবং মিডিয়া আর্টের ক্ষেত্রেও রোবট ব্যবহৃত হয়।

৭) নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণঃ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য, অন্ধকারে কোনো আগন্তুককে পর্যবেক্ষণ করার জন্য, দুস্কৃতকারী কিংবা বিপজ্জনক আসামীকে ধরা এবং পর্যবেক্ষণে পুলিশকে রোবট সহায়তা দিতে থাকে।

৮) মহাকাশ গবেষণায়ঃ মহাকাশে কিংবা অন্য গ্রহ-উপগ্রহ সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্যানুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য বা মহাকাশ যান প্রেরণ করার সময় ব্যাপকহারে রোবটের ব্যবহার আছে।

৯) ঘরোয়া কাজেঃ দৈনন্দিন ঘরোয়া কাজে, গৃহকর্মী হিসেবে নিত্যনৈমিত্তিক কার্যাদি সম্পাদনের জন্য রোবট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ভবিষ্যতে রোবটের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরো ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করে রোবটকে অনেক নতুন নতুন কাজে ব্যবহার করা যাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url