নবায়নযোগ্য শক্তি কাকে বলে? নবায়নযোগ্য শক্তির সুবিধা ও অসুবিধা

নবায়নযোগ্য শক্তি কাকে বলে?

যে সকল শক্তি অফুরন্ত, যা কখনো শেষ হয় না, তাদেরকে নবায়নযোগ্য শক্তি বলে। সৌরশক্তি, সমুদ্র স্রোত, বায়ুশক্তি ও পারমাণবিক শক্তি ইত্যাদি হতে নবায়নযোগ্য শক্তি পাওয়া যায়। এসব শক্তি বারবার ব্যবহার করার পরও নিঃশ্বেষ হয়ে যায় না। এসব শক্তির উৎস অফুরন্ত।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন: সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি, ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র তাপ, জোয়ার ভাঁটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরো পড়ুনঃ

নবায়নযোগ্য শক্তির সুবিধা

নবায়নযোগ্য শক্তি হল এমন শক্তি যা জীবাশ্ম জ্বালানির মতো সীমিত সম্পদ থেকে আসে না, বরং প্রাকৃতিক উৎস থেকে আসে যা পুনরায় পূরণ করা যায়। নবায়নযোগ্য শক্তির অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • পরিবেশগত সুবিধা: নবায়নযোগ্য শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে না, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বায়ু দূষণ, জল দূষণ এবং মাটি ক্ষয় কমাতেও সাহায্য করে।
  • নিরাপত্তা সুবিধা: জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা বিশ্বকে জ্বালানির দাম ও সরবরাহের অনিশ্চয়তার ঝুঁকিতে ফেলে। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি অনেক বেশি বিতরণ করা হয় এবং তাই জ্বালানির নিরাপত্তা বাড়ায়।
  • অর্থনৈতিক সুবিধা: নবায়নযোগ্য শক্তির শিল্প ক্রমবর্ধমানভাবে বড় এবং উদ্ভাবনী হয়ে উঠছে। নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
  • সামাজিক সুবিধা: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি প্রায়শই স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে জড়িত করে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির জন্য বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে।

নবায়নযোগ্য শক্তির কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা নিম্নরূপ:

  • সৌর শক্তি: সৌর শক্তি একটি পরিষ্কার, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস যা সূর্যের আলো থেকে শক্তি তৈরি করে। সৌর শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গরম জল সরবরাহ এবং এমনকি যানবাহন চালানো যেতে পারে।
  • বায়ু শক্তি: বায়ু শক্তি একটি পরিষ্কার, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস যা বাতাসের গতি থেকে শক্তি তৈরি করে। বায়ু টারবাইনগুলি বাতাসের শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তর করে।
  • জলবিদ্যুৎ: জলবিদ্যুৎ একটি পরিষ্কার, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস যা জলের প্রবাহ থেকে শক্তি তৈরি করে। বাঁধগুলি জলকে ধরে রাখে এবং তারপরে জেনারেটরগুলি চালাতে ছেড়ে দেয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
  • জৈব জ্বালানি: জৈব জ্বালানি হল উদ্ভিদ বা প্রাণী থেকে তৈরি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস। জৈব জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে।
  • ভূতাপীয় শক্তি: ভূতাপীয় শক্তি হল ভূগর্ভের গরম পানির তাপ থেকে শক্তি তৈরি করে। ভূতাপীয় শক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন, গরম জল সরবরাহ এবং এমনকি বাড়িগুলিকে গরম করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস: নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যান্য উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে তরঙ্গ শক্তি, লবণাক্ততা শক্তি এবং তরল হাইড্রোজেন। এই উৎসগুলি এখনও উন্নয়নাধীন, তবে তারা ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নবায়নযোগ্য শক্তির অসুবিধা

নবায়নযোগ্য শক্তির অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তির অসুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • প্রযুক্তিগত অসুবিধা: নবায়নযোগ্য শক্তির কিছু উৎস এখনও উন্নয়নাধীন, এবং তাদের দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব উন্নত করার জন্য আরও গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রয়োজন।
  • খরচ: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি প্রায়শই জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল হয়।
  • পরিবেশগত প্রভাব: কিছু নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, যেমন বায়ু শক্তি, পরিবেশগত প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন পাখি হত্যা।
  • সরবরাহের অনিশ্চয়তা: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, তাই তারা সর্বদা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
  • অবকাঠামোগত অসুবিধা: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলির জন্য নতুন অবকাঠামো প্রয়োজন হতে পারে, যেমন বায়ু টারবাইন বা সৌর প্যানেল।
  • সঞ্চয়ের অসুবিধা: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি প্রায়শই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নিয়মিত সূর্য বা বাতাসের প্রয়োজন হয়, তাই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চয় করার জন্য নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন হতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক সম্পদ কাকে বলে? প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকারভেদ, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উপায়, প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url