লেনদেন

লেনদেন

মানুষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই দৈনন্দিন জীবনে হিসাব ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আসছে। আদিকালে প্রত্যেকে তাঁর প্রাত্যাহিক জীবনের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে পণ্য বিনিময় করত। যে ঘটনাগুলো কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে কেবল ঐ ঘটনাগুলো থেকেই লেনদেনের জন্ম হয় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে সকল ঘটনাই লেনদেন হবে না। ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক চিত্র পাবার জন্য শুধু অর্থ সর্ম্পকিত ঘটনাগুলোই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

শিখনফল-

  • লেনদেনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • লেনদেনের প্রকৃতি শনাক্ত করতে পারব।
  • হিসাব সমীকরণ বিশেষণ করতে পারব।
  • হিসাব সমীকরণে ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের উৎস দলিলাদি তালিকা তৈরি করে বর্ণনা করতে পারব।
  • লেনদেনের সমর্থনে প্রয়োজনীয় দলিলাদি যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে পারব।

লেনদেনের ধারণা

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় হিসাব লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে লেনদেন শব্দটির অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায় জগতে বিভিন্ন ঘটনার উদ্ভব হয়। কিন্তু সমস্ত ঘটনাকে হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় না। অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য ঘটনা যা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে সেই সমস্ত ঘটনাকেই লেনদেন হিসেবে হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, জনাব সীমান্ত ৫,০০০ টাকা দিয়ে অফিসের জন্য একটি আলমারী ক্রয় করলেন, আবার দোকান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হলেন, উল্লেখিত দুটি ক্ষেত্রেই ঘটনার জন্ম হল। কিন্তু প্রথমটি যেহেতু অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য এবং ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করেছে সেজন্য প্রথম ঘটনাটি লেনদেন, দ্বিতীয় ঘটনায় যেহেতু আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই এবং ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি সেহেতু দ্বিতীয় ঘটনাটি ব্যবসায়ের লেনদেন হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে না।

লেনদেন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল গ্রহণ ও প্রদান অর্থাৎ দেয়া ও নেয়া ইংরেজিতে যাকে বলা হয় give and take, সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনার একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে এক পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করে এবং অন্য পক্ষ সুবিধা প্রদান করে।

যেমন- মানিক রতনকে ১,০০০ টাকা দিল । এই কার্যের মধ্যে আমরা দুটি পক্ষ দেখতে পাই - রতন ১,০০০ টাকা গ্রহণ করল ও মানিক ১,০০০ টাকা প্রদান করল। চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি বুঝানো হলো।

নগদ টাকার আদান প্রদান বা বাকীতে ক্রয় বিক্রয় ছাড়াও সেবা আদান প্রদানের মাধ্যমে লেনদেনের উদ্ভব হতে পারে। যেমন মিসেস মাহবুবাকে কাজের বিনিময়ে ২,০০০ টাকা বেতন দেয়া হল অথবা ঘর ভাড়া বাবদ ৩,০০০ টাকা পাওয়া গেল ইহাও লেনদেন। আবার অদৃশ্য ভাবে কোন আর্থিক ঘটনা ঘটে থাকলে তাহাও লেনদেন হতে পারে। যেমন : দীর্ঘদিন সম্পদ ব্যবহারের ফলে যে মূল্য হ্রাস হয় এর মাধ্যমেও লেনদেনের সৃষ্টি হয়। 

অর্থের আদান প্রদান বা অর্থের মাপকাঠিতে পরিামাপযোগ্য কোন ঘটনা (Event) বা সেবা (service) আদান প্রদানের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে ঐ সমস্ত ঘটনা বা আদান প্রদানকে লেনদেন বলা হয়।

বস্তুতঃ দ্রব্য সামগ্রী ও সেবা কর্মের বিনিময়ের ফলে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে লেনদেনের সৃষ্টি হয়।

লেনদেনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য

প্রত্যেকটি লেনদেনই ঘটনা কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনা লেনদেন নয়। লেনদেনের ধারণাটিকে বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়।


*

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url