আধুনিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি কী কী?

আধুনিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি কী কী?

অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন, সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়া অধিকাংশ লোকের স্বাধীনতা ভোগ সম্ভব নয়। বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য যেসব রক্ষাকবচের ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে সেগুলি হলোঃ

১) সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ঘোষণাঃ সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিবদ্ধ করা এবং ঐসব অধিকার ভঙ্গ হলে তার প্রতিবিধানের উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখা স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসাবে স্বীকৃত। মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ থাকলে নাগরিকগণ ঐগুলি সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং অধিকারগুলির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সরকার যদি ঐ সব অধিকার ভঙ্গ করে তাহলে নাগরিকগণ তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আদালতের আশ্রয় নিতে পারে।

২) আইনের অনুশাসনঃ ব্রিটেনের ন্যায় যেসব দেশে লিখিত সংবিধান নেই, সেখানে ব্যক্তি-স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসাবে আইনের অনুশাসনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

৩) ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণঃ সরকারের সকল ক্ষমতা একই ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে স্বৈরাচারিতা প্রশ্রয় পাবে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। তাই আইন প্রণয়ন, শাসন ও বিচারকার্য পরিচালনার দায়িত্ব যথাক্রমে আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচার বিভাগের হস্তে ন্যস্ত করা উচিত।

৪) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারালয়ঃ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের অস্তিত্বকে ব্যক্তি-স্বাধীনতা রক্ষার একটি আবশ্যিক শর্ত বলে মনে করা হয়।

৫) দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থাঃ দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থায় সরকার তার যাবতীয় কাজের রক্ষার আইনসভা এবং তার মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়িত্বশীল থাকে। তাছাড়া আইনসভায় বিরোধী দলের অস্তিত্ব থাকার জন্য সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না বা ব্যক্তি - স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সরকার ভুল করলে বা জনবিরোধী কাজ করলে বিরোধী দলগুলি সেগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরে এবং জনমতকে নিজেদের সপক্ষে আনতে সচেষ্ট হয়। তাই সরকার কখনও ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী কাজ করতে সাহস পায় না।

৬) অন্যান্যঃ এছাড়া, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সদাসতর্ক জনমত, গণভোট, গণউদ্যোগ, প্রত্যাহার প্রভৃতিকে স্বাধীনতার অন্যান্য রক্ষাকবচ বলে গণ্য করা হয়।

তবে মার্কসবাদীদের মতে, স্বাধীনতার সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ হলো শ্রেণীহীন শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url