ধ্রুপদি বা সাবেকি উদারনীতিবাদের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা কর।

ধ্রুপদি বা সাবেকি উদারনীতিবাদের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা কর।

লক এর Two Treatises of Governement শীর্ষক গ্রন্থটি ১৬৯০ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর ধ্রুপদি উদারনীতিবাদ এর সূচনা ঘটে। জন লক, জেরেমি বেন্থাম, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল, স্পেনসার, মন্তেস্কু প্রমুখ হলেন ধ্রুপদি উদারনীতিবাদের মুখ্য প্রবক্তা। ধ্রুপদি উদারনীতিবাদের মূলনীতিগুলি হলো -

অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক অধিকারঃ জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং সম্পত্তির অধিকারকে রক্ষার জন্যেই চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। তাই রাষ্ট্র কোনোভাবেই এই অধিকারগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

চুক্তিভিত্তিক সম্পর্কঃ জন লকের মতে, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক পুরোপুরি চুক্তিভিত্তিক। ব্যক্তির প্রাকৃতিক অধিকারগুলি রক্ষায় রাষ্ট্র যদি চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে তাহলে জনগণ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

শাসিতের সম্মতিঃ জনগণের সম্মতি হল রাষ্ট্রের মূলভিত্তি। এই কারণে উদারনৈতিক সরকারকে বলা হয় শাসিতের সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকার।

আইনের অনুশাসনঃ শাসক ও শাসিত উভয়েই আইনের অনুশাসনের অধীন। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে তার কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে। আইনের অনুশাসনের ওপর ভিত্তি করে সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিস্বাধীনতাঃ ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। রাষ্ট্র ব্যক্তিস্বাধীনতার পথে বাধাগুলি দূর করতে প্রয়াসী হবে। জাতিধর্মবর্ণ-স্ত্রীপুরুষনির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সম্পত্তি ও বিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রীপুরুষের সমান অধিকার ইত্যাদিকে উদারনীতিবাদে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সর্বাধিক সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেরেমি বেন্থামের মতে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল সর্বাধিক পরিমাণ সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা। তবে তাঁর অভিমত ছিল, ব্যক্তির সর্বাধিক পরিমাণ সুখস্বাচ্ছন্দ্যের মাপকাঠির বিচার ব্যক্তি নিজেই করবে, রাষ্ট্র নয়।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবাধ নীতিঃ ধ্রুপদি উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবাধ নীতি বা Laissez faire Policy-কে স্বীকৃতি দেন। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণহীন অবাধ প্রতিযোগিতা থাকলে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ সাধিত হবে।

রাষ্ট্রের সীমিত ও ইতিবাচক কর্মপরিধিঃ অ্যাডাম স্মিথের মতে, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করা, অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করা এবং জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম সম্পাদন করা ইত্যাদির মধ্যেই রাষ্ট্রের কার্যকলাপ সীমিত থাকা উচিত। জন স্টুয়ার্ট মিল এর মতে, রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম হবে গঠনমূলক বা ইতিবাচক। এর মধ্যে রয়েছে সমাজের সমষ্টিগত মঙ্গলের জন্য আবশ্যিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ, একচেটিয়া কারবারের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, শিশুদের স্বার্থে কারখানা আইন নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও সহযোগিতাঃ জাতিগত সাম্য, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, আঞ্চলিক ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও সহযোগিতাকে ধ্রুপদি উদারনীতিবাদে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে স্থান দেওয়া হয়েছে।

উদারনীতিবাদের জনক হিসাবে কে পরিচিত হয়ে থাকেন?

উদারনীতিবাদের জনক হিসাবে জন লক পরিচিত।

আধুনিক উদারনীতিবাদের সূত্রপাত কখন হয়েছিল?

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে আধুনিক উদারনীতিবাদের সূত্রপাত ঘটেছিল।

আধুনিক উদারনীতিবাদের যেকোনো একজন প্রবক্তার নাম লেখো?

আধুনিক উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা হলেন হ্যারল্ড ল্যাস্কি।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url