নয়া উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

নয়া উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

(Discuss, in short, the basic features of neo-liberalism)

উদারনীতিবাদী দর্শনের নব প্রজন্মের চিন্তাবিদরা বিংশ শতাব্দীর অষ্টম দশকে নয়-উদারনীতিবাদী তত্ত্বের অবতারণা করেন। নয়-উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হলো -

ন্যূনতম রাষ্ট্রঃ নয়া-উদারনীতিবাদে রাষ্ট্রের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটানো হয়। অতি ক্ষমতাশালী ও আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বদলে এক ন্যূনতম কর্মসূচিসম্পন্ন রাষ্ট্র বা সীমিত রাষ্ট্রের ধারণাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। নয়-উদারনীতিবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান এবং নাগরিকদের ন্যায়সংগতভাবে অর্জিত ব্যক্তিগত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করা।

ব্যক্তিস্বাধীনতা সম্প্রসারণঃ নয়া-উদারনীতিবাদে ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপকতার সম্প্রসারণের কথা বলা হয়। নয়া-উদারনীতিবাদের প্রবক্তাদের মতে, ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণের জন্যই রাষ্ট্রের প্রয়োজন।

অবাধ বাণিজ্যনীতির পুনরুজ্জীবনঃ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো রকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নয়া-উদারনীতিবাদীরা স্বীকার করেননি। নয়া-উদারনীতিবাদের বক্তব্য অনুসারে, ব্যক্তিকে প্রকৃত উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে তার অর্থনৈতিক জীবনকে সর্বপ্রকার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে হবে।

মুক্ত বাজার অর্থনীতিঃ নয়া-উদারনীতিবাদে মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নয়া-উদারনীতিবাদ মনে করে যে, একমাত্র অনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতিই প্রাচুর্য, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম।

প্রাকৃতিক অধিকার তত্ত্বের সমর্থনঃ রবার্ট নজিক তাঁর 'Anarchy, State and Utopia' শীর্ষক গ্রন্থে জন লকের প্রাকৃতিক অধিকার তত্ত্বের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, নাগরিকদের সম্পত্তি অর্জন ও ভোগের অধিকার এবং চুক্তির স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয়। রাষ্ট্র কোনোভাবেই এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এমনকি ধনীদের ওপর কর আরোপের নীতিকে নয়া-উদারনীতিবাদীরা কঠোরভাবে নিন্দা করেন।

পুঁজির বিশ্বায়নঃ নয়া-উদারনীতিবাদ সারা বিশ্বজুড়ে পুঁজির অবাধ চলাচলের পক্ষপাতী। পুঁজির বিশ্বায়ন হলো নয়া-উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রধান নীতি। এই কারণে বিশ্বব্যাপী অনিয়ন্ত্রিত ও অবাধ প্রতিযোগিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক ক্ষমতা-বিকেন্দ্রীকরণঃ নয়া - উদারনীতিবাদ ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্বৈরী প্রতিষ্ঠানের তীব্র বিরোধী। নয়া-উদারনীতিবাদ রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষপাতী।

প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ নয়া-উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা হায়েক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। 

ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরোধিতাঃ নয়া-উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা ইশিয়া বার্লিন ব্যক্তির স্বাধীনতা বা পছন্দের ওপর কোনো রকম হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে, ব্যক্তিগত জীবনের এলাকা ও সরকারি কর্তৃত্বের এলাকার মধ্যে একটা সীমারেখা থাকা উচিত।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url