হিজড়া কাকে বলে? হিজড়া কত প্রকার ও কি কি?

হিজড়া কাকে বলে?

নারীও নয় আবার পুরুষও নয়- এধরনের একটি শ্রেণীকে আমরা প্রায়ই রাস্তাঘাটে কিংবা দোকানপাটে বিভিন্নরকম অঙ্গভঙ্গি করে চাঁদা তুলতে দেখি। আমরা যারা সভ্যসমাজের মানুষ, তারা এই অবহেলিত শ্রেণীটিকে ‘হিজড়া’ বলে ডাকি।

হিজড়া নারী আর পুরুষের মত নয়, হিজড়াদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হিজড়া শব্দকে তারা অভিশাপ বা গালি হিসেবে মনে করেন। আসলে তারা হচ্ছেন, ট্রানজেন্ডার। প্রকৃতির নিয়তিতেই এরা স্বাভাবিক মানুষের পরিবর্তে হিজড়ায় রূপান্তরিত হয়। ঠিক যেমনটি ঘটে থাকে একজন প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, প্রতিবন্ধীদের জন্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে এবং তাদেরকে সমাজের মূলস্রোতের অন্তর্ভূক্ত করতে নানারকম সরকারি-বেসরকারি আন্দোলন ও পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হলেও হিজড়াদের কল্যাণে এরকম কোনো কর্মসূচি চোখে পড়ে না আমাদের দেশে।

হিজড়া ব্যক্তিদের একটি লিঙ্গ পরিচয় বা লিঙ্গ প্রকাশ থাকে যা তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ থেকে পৃথক করে । কিছু হিজড়া ব্যক্তি যারা চিকিত্সা সহায়তা থেকে একটি লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে রূপান্তরিত করতে চান তারা হিজড়া হিসাবে চিহ্নিত করেন । লিঙ্গ , প্রায়শই সংক্ষিপ্ত ট্রান্স , এছাড়াও একটি হল বৃহত্তর শব্দ ; এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি যাঁদের লিঙ্গ পরিচয় তাদের নির্ধারিত লিঙ্গের বিপরীত ( ট্রান্স পুরুষ এবং ট্রান্স মহিলারা ), এতে এমন ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। নন-বাইনারি বা জেন্ডিকারী । হিজড়া সম্পর্কিত অন্যান্য সংজ্ঞায় এমন ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয় যারা তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত , অথবা অন্যথায় হিজড়া লোককে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে ধারণ করে । হিজড়া শব্দটি ক্রস-ড্রেসারগুলি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য খুব বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে । 

হিজড়া হওয়া যৌনতা থেকে পৃথক । হিজড়াদের বিষমকামী, সমকামী, যেমন শনাক্ত করতে পারে উভকামী , অযৌন , বা তাদের যৌন অভিযোজন লেবেল পতন হতে পারে। মেয়াদ হিজড়াদের এছাড়াও থেকে আলাদা হয় উভলিঙ্গতা , একটি শব্দ যে প্রকৃত যৌন বৈশিষ্ট্য "যে পুরুষ বা মহিলা সংস্থা টিপিক্যাল বাইনারি ধারণার মাপসই করা হবে না" দিয়ে জন্ম মানুষ বর্ণনা করা হয়েছে। হিজড়া বিপরীতে হ'ল সিজেন্ডার , যা তাদের লিখিত পরিচয় তাদের নির্ধারিত লিঙ্গের সাথে মেলে এমন ব্যক্তির বর্ণনা দেয়।

ব্যক্তিরা যে মাত্রায় প্রকৃত, খাঁটি এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বাহ্যিক উপস্থিতির মধ্যে অনুভূত হয় এবং তাদের আসল পরিচয় স্বীকার করে তাকে ট্রান্সজেন্ডার সম্মিলন বলে । অনেক হিজড়া লোক লিঙ্গ ডিসফোরিয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং কেউ কেউ হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি , সেক্স রিসাইনমেন্ট সার্জারি বা সাইকোথেরাপির মতো চিকিত্সা করে । সমস্ত হিজড়া লোকেরা এই চিকিত্সাগুলি পছন্দ করে না এবং কেউ কেউ আর্থিক বা চিকিত্সার কারণে তাদের পাসও করতে পারে না। 

অনেক হিজড়া লোক কর্মক্ষেত্রে এবং জনসাধারণের থাকার জায়গা এবং স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেসে বৈষম্যের মুখোমুখি হয় । অনেক জায়গায়, তারা বৈধভাবে বৈষম্য থেকে সুরক্ষিত নয়।

সভ্যসমাজ থেকে একপ্রকার নির্বাসিত এই শ্রেণীটি তাই বিকৃত মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠে। পেটের তাগিদে জড়িয়ে পড়ে নানারকম অপরাধমূলক কার্যক্রমে। অথচ ‘মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এসব হিজড়াদের সামাজিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারলে তারাও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৃথিবীতে দুই ধরনের হিজড়া রয়েছে। পুরুষের মতো শারীরিক গঠন আর মানসিকভাবে নারীর স্বভাব, তাদেরকে অকুয়া বলা হয়।

এছাড়া, অন্য প্রকৃতির যারা তাদেরকে জেনেনা বলা হয়। অকুয়া ও জেনেনা জাতির হিজড়া হচ্ছে প্রকৃতির সৃষ্টি।

চিকিৎসকরা জানান, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ডিম্বাণূু ও শুক্রাণু এক্স-এক্স প্যাটার্নে কণ্যা শিশু আর এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে পুত্র শিশুর জন্ম গ্রহণ করে। জরায়ূতে ভ্রুনের বিকাশ হওয়ার সময় মায়েদের বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানুষিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর এক্স- এক্স- ওয়াই, আবার এক্স-ওয়াই-ওয়াই এর প্যার্টার্নে ছেলে বা মেয়ে হয়ে থাকে। এরপর জেনেটিক পরির্বতনের কারণে হিজড়ায় পরিণত হয়।


হিজড়া এর প্রকারভেদ

শারীরিক ও মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করে এদেরকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। শারীরিক ভাবে পুরুষ কিন্তু মানষিক ভাবে নারী বৈশীষ্ট্য এর অধীকারী হিজড়াদের বলা হয় অকুয়া, অন্য হিজড়াদের ভরা হয় জেনানা, আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড পুরুষদের বলা হয় চিন্নি।


হিজড়ার বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা 

এক্স এক্স প্যাটার্ন ডিম্বানুর সমন্বয়ে কন্যা শিশু আর এক্স ওয়াই প্যাটার্ন থেকে সৃষ্ট হয় ছেলে শিশু। ভ্রুনের পূর্ণতার স্তর গুলোতে ক্রোমোজোম প্যাটার্নের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে অন্ডকোষ আর কন্যা শিশুর মধ্য ডিম্ব কোষ জন্ম নেয়। অন্ডকোষ থেকে নিসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্ব কোষ থেকে নিসৃত হয় এস্ট্রোজেন। ভ্রুনের বিকাশকালে নিষিক্তকরন ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সৃষ্টি হয় যেমন এক্স এক্স ওয়াই অথবা এক্স ওয়াই ওয়াই। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়া শিশুর জন্ম হয়।

অধিকাংশই হিজড়াই স্বাভাবিক পরিবারের সাথে সংসার করতে পারবে। অনেকের স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক গঠন পরিবর্তন করে সমাজে হিজড়া হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছে। এ পরিচয়ের সুবাধে অনেকেই চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।


হিজড়াদের সম্পর্কে কি বলে ইসলাম

শান্তি এবং মানবতার ধর্ম ইসলাম সব মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। এ সময়ের সচেতন ও বিচক্ষণ আলেম, বেশক’টি মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও বাংলাদেশ কওমি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুস সামাদ। 

হিজড়াদের ইসলামে কীভাবে দেখা হয়? জানতে চাইলে বলেন, ‘ইসলাম হিজড়াদের ওপর অবিচার করেনি। অন্যসব মানুষের মতো একজন মানুষ হিসেবে দেখেছে হিজড়াদের। পুরুষ হলে পুরুষের, নারী হলে নারীর বিধান মেনে চলতে হবে তাদের। একজন নারীর যেমন নামাজ, রোজা ও পর্দাসহ ইসলামের সব বিধান মানতে হয়, একজন নারী হিজড়াকেও এগুলো মেনে চলতে হয়। এভাবে পুরুষের মতো পুরুষ হিজড়াকেও। মৃত সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও কাফন, দাফন ও জানাজা দিয়ে কবর দেয়ার হুকুম। তারা এগুলো মানে না বলেই তো তাদের এ করুণ অবস্থা।’ একটি চক্র সুস্থ মানুষের অঙ্গহানি করে হিজড়া বানিয়ে ফেলছে। কেউ নিজের আগ্রহে হিজড়া হচ্ছে। এদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অঙ্গহানি নাজায়েজ। মারাত্মক অপরাধ। কারও জটিল দুরারোগ্য ব্যথা হলেও ধার্মিক অভিজ্ঞ ডাক্টারের পরামর্শ ছাড়া অঙ্গ কাটার কোন সুযোগ ইসলাম দেয়নি। এ ছাড়া একজন সুস্থ মানুষের অঙ্গহানি করে অসুস্থ বানানো, সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা অমার্জনীয় অপরাধ। কঠোর হস্তে দমন করা উচিত।’ 

চাঁদাবাজি, মাদক ও পতিতাবৃত্তির মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত দেখা যায় হিজড়াদের, এর কারণ কী? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হিজড়া বানানো বা হওয়ার লক্ষ্য কিন্তু ইনকাম। হিজড়াদের কোন আইনি জটিলতা না থাকায় তারা অবাধে অপরাধ বিস্তার করে যাচ্ছে।’ 

হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কী করা উচিত? এমন প্রশ্নে মাওলানা সামাদ বলেন, ‘প্রথমত হিজড়াপ্রজনন কেন্দ্র বন্ধ এবং এর কারিগর ডিগ্রিধারী ডাক্টারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো দমন করতে হবে। বিভিন্ন পত্রিকায় এদের চিহ্নিতও করা হয়েছে। তাতে হিজড়া উৎপাদন বন্ধ হবে। এরপর সামাজিকভাবে আড়চোখে না দেখে একজন মানুষের মতো সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া মৌলিক হিজড়াদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ী ব্যবস্থা নিলে হিজড়ারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে বলে আশা করা যায়।’ পুরুষাঙ্গ কেটে সুস্থ মানুষকে হিজড়া বানানো হয় একথা শুনে আঁতকে উঠলেন দেশ মাটি হাউজিং লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান, অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি আলহাজ মোহাম্মদ আবুল খায়ের ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘অভাব এবং অসচেতনতাই এ কাজকে ত্বরান্বিত করেছে। মানুষের সম্মানের ভয় হিজড়াদের অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়েছে। তারা যেখানে সেখানে কাপড় উদাম করে ফেলে। হিজড়া, অসহায় এবং অভাবীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে অপরাধপ্রবণতা কমবে। তারা স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন লাভে ধন্য হবে।’

আরো পড়ুনঃ

👉  থ্রম্বোসিস কাকে বলে?

👉  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কোথায় কোথায় ব্যবহার করা যায়?

👉  এজমা থেকে মুক্তির উপায়

👉  প্লাজমা থেরাপি কাকে বলে? প্লাজমা দান করতে পারেন কেন? প্লাজমা থেরাপির ঝুঁকি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url