গতিশক্তি কাকে বলে?

গতিশক্তি কাকে বলে?

কোনো গতিশীল বস্ত তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে গতিশক্তি বলে।

কোনো গতিশীল বস্তু স্থির অবস্থায় আসার পূর্ব পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ করতে পারে তার দ্বারা বস্তুটির গতিশক্তি পরিমাপ করা হয়।

পদার্থবিজ্ঞানে গতিশক্তি বলতে কোন বস্তুর গতির কারণে কাজ করার সামর্থ্য লাভ করে তা বোঝানো হয়।


গতিশক্তির ব্যাখ্যা

কোনো স্থির বস্তুতে বেগের সঞ্চার করা আর গতিশীল বস্তুর বেগ বৃদ্ধি করার অর্থ হচ্ছে বস্তুটিতে ত্বরণ সৃষ্টি করা। আর এ জন্য বল প্রয়োগ করতে হবে। ফলে বস্তুর উপর কাজ করা হবে। এতে বস্তুটি কাজ করার সামর্থ্য লাভ করবে এবং এ কাজ বস্তুতে গতিশক্তি হিসেবে জমা থাকবে। সে কারণে সকল সচল বস্তুই গতিশক্তির অধিকারী। বস্তু স্থিতিতে আসার পূর্বে এ পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।

ধরা যাক, m ভরের একটি স্থির বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করায় বস্তুটি v বেগ প্রাপ্ত হলো। ধরা যাক, এ সময় বস্তুটি বলের দিকে s দূরত্ব অতিক্রম করে। বস্তুটিকে এই বেগ দিতে কৃত কাজই বস্তুর গতিশক্তি। 

তাহলে, গতিশক্তি = 1/× ভর × (বেগ)

গতিশক্তির একক

গতিশক্তির একক হলো জুল (Joule)।


গতিশক্তি বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে। বস্তুর ভর যত বেশি হয় তার গতিশক্তিও তত বেশি হয়। একই বেগে তোমার দিকে একটি হালকা টেনিস বল আর একটি ভারী ক্রিকেট বল নিক্ষেপ করা হলে ক্রিকেট বল কর্তৃক আঘাত বেশি হবে।

গতিশক্তি বেগের উপরও নির্ভর করে। বস্তুর বেগ বেশি হলে তার গতিশক্তিও বেশি হবে। একটি ট্রাক কম বেগে কোনো দেয়ালকে আঘাত করলে যে ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ঐ ট্রাকটি যদি বেশি বেগে ঐ দেয়ালকে আঘাত করে।


গতিশক্তির বর্ণনা

কোন বস্তকে স্থির অবস্থা থেকে কোন নির্দিষ্ট বেগে ত্বরিত করতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় তা দিয়ে এর গতিশক্তির পরিমাপ করা হয়। এটিকে ত্বরিত করার সময় এই শক্তি অর্জন করলে, বস্তুটি যদি বেগ পরিবর্তন না করে তাহলে ত্বরণের সময় অর্জিত এই গতিশক্তি অব্যাহত থাকে। বস্তুটিকে এর বর্তমান বেগ থেকে পুনরায় স্থির অবস্থায় নেওয়ার জন্য মন্দনের ফলে একই পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

কক্ষীয় গতিতে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট গতিশক্তি উৎপাদন এবং ব্যবহার করতে মহাকাশযানে রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করা হয়। একটি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার কক্ষপথে এই গতিশক্তি শক্তি স্থির থাকে কারণ পৃথিবীর কাছাকাছি শূন্যস্থানে প্রায় কোনও ঘর্ষণ নেই। যাইহোক, কিছু গতিশক্তি তাপে রূপান্তরিত করা হলে এটি পুনরায় প্রবেশের সময় স্পষ্ট হয়। যদি কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার বা অধিবৃত্তীয় হয় তবে কক্ষপথ জুড়ে গতিশক্তি এবং বিভব শক্তি বিনিময় হয়; পৃথিবী বা অন্যান্য বৃহত্তর বস্তুর নিকটতম স্থানে গতিশক্তি সর্বাধিক এবং বিভব শক্তি সর্বনিম্ন, এবং সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে বিভব শক্তি সর্বাধিক এবং গতিশক্তি সর্বনিম্ন। কিন্তু, ব্যয় বা লাভ ব্যতীত, গতিশক্তি এবং বিভব শক্তির যোগফল সর্বদা ধ্রুব থাকে।

গতিশক্তি এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে যেতে পারে। বিলিয়ার্ড খেলায় খেলোয়াড় কিউ স্টিক দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে কিউ বলের উপর গতিশক্তি প্রয়োগ করে। যদি কিউ বলটির অন্য বলের সাথে সংঘর্ষ হয়, তাহলে এর গতি নাটকীয়ভাবে কমে যায় এবং গতিশক্তি স্থানান্তরের কারণে এটি যে বলকে আঘাত করে সেটি ত্বরণপ্রাপ্ত হয়। বিলিয়ার্ডে সংঘর্ষগুলি কার্যকরভাবে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ, যেখানে গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে। অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষে গতিশক্তি বিভিন্ন ধরণের শক্তি যেমন: তাপ, শব্দ, বাঁধাই শক্তি (আবদ্ধ কাঠামো ভাঙা) ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়।


প্রসঙ্গ কাঠামো

একটি একক বস্তুর গতি এবং গতিশক্তি হলো প্রসঙ্গ নির্ভর (আপেক্ষিক): উপযুক্ত জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর উপর নির্ভর করে এটি যেকোনো অঋণাত্মক মান গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পর্যবেক্ষকের সামনে দিয়ে যাওয়া একটি বুলেটের এই পর্যবেক্ষকের প্রসঙ্গ কাঠামোতে গতিশক্তি রয়েছে। বুলেটের সাথে একই গতিবেগে চলমান একজন পর্যবেক্ষকের কাছে বুলেটটি স্থির, এবং তাই এর গতিশক্তি শূন্য।

বিপরীতভাবে, যদি সকল বস্তু সমান গতিসম্পন্ন না হয় তবে পছন্দমতো জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে সমস্ত গঠনের গতিশক্তি শূন্য ধরা যাবে না। যেহেতু এমন কোনো জড় প্রসঙ্গ কাঠামো চয়ন করা যায় না যেখানে সমস্ত বস্তু স্থির থাকে, সেক্ষেত্রে কোন গঠন বা বস্তুর সর্বনিম্ন গতিশক্তি একটি অশূন্য মান। এই সর্বনিম্ন গতিশক্তি গঠনের স্থির ভরে অবদান রাখে, যা প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে স্বাধীন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url