অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কাকে বলে?

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কাকে বলে?

যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ গ্রন্থির বাইরে না এসে সরাসরি গ্রন্থি মধ্যস্থ কলারস বা রক্তে যুক্ত হয় তাদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। যেমন - থাইরয়েড, পিটুইটারি ইত্যাদি।

নালীবিহীন যেসব গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়ে রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন স্থানে প্রেরিত হয় ঐ সব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলা হয়। যেমন - থাইরয়েড গ্রন্থি, পিটুইটারি গ্রন্থি, আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স, অ্যাডরেনাল গ্রন্থি, হাইপোহ্যালামাস গ্রন্থি ইত্যাদি।

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে কোন নালী থাকে না বিধায় এদের অনালী বা নালীবিহীন গ্রন্থিও বলা হয়।


থাইরয়েড গ্রন্থি


থাইরয়েড গ্রন্থি

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোন হলো: 

ক্ষরিত হরমোন   সংক্ষিপ্ত রূপ উৎপত্তি স্থানপ্রভাব
 ট্রাই-আয়োডোথাইরিনন T3 থাইরয়েড এপিথেলিয়াল কোষ থাইরয়েড হরমোনের থেকেও বেশি প্রভাব বিস্তারকারী। শরীরের অক্সিজেন ব্যয় করে, এভাবে শ্বসন হার (basal metabolic rate) বাড়ায়।
RNA পলিমারেজ (I) এবং (II) উদ্দীপ্ত করে, এভাবে প্রোটিন সংশ্লেষণ বৃদ্ধি করে।
থাইরক্সিন T4 থাইরয়েড এপিথেলিয়াল কোষ শরীরের অক্সিজেন ব্যয় করে, এভাবে শ্বসন হার বাড়ায়।
RNA পলিমারেজ (I) এবং (II) উদ্দীপ্ত করে, এভাবে প্রোটিন সংশ্লেষণ বৃদ্ধি করে।
ক্যালসিটোসিন - প্যারাফলিকুলার কোষ অস্টিওব্লাস্ট উদ্দীপ্ত করে, এভাবে হাড়ের গঠন বৃদ্ধি করে। 
হাড় থেকে Ca2+ মুক্ত হতে বাঁধা দেয়, এভাবে রক্তের Ca2+ পরিমাণ কমায়।


পিটুইটারি গ্রন্থি


পিটুইটারি গ্রন্থি

পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন ও তাদের কাজ

A.C.T.H. বা অ্যাডরিনো কর্টিকোট্রফিক হরমোন 

ACTH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । ACTH হরমোনের কাজ হল :

  • অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ।

  • অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলকে উদ্দীপিত করে তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ।

  • এই হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে অ্যাডরিনাল কর্টেক্সের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে কুশিং বর্ণিত রোগ হয়।


G.H. বা গ্রোথ হরমোন বা বৃদ্ধি পোষক হরমোন

GH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । GH হরমোনের কাজ হল :

  • মানবদেহের তথা প্রাণীদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায় ।
  • অস্থি ও তরুনাস্থির দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি ঘটায় ।
  • শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাট বিপাকে সাহায্য করে ।
  • এই হরমোনের কম ক্ষরণে বামনত্ব বা ডোয়ারফিজম এবং অধিক ক্ষরণে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম বা অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয় ।


T.S.H. বা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন

TSH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । TSH হরমোনের কাজ হল :
  • থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
  • থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা ।
  • দেহের আয়োডিন বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা ।
  • এই হরমোনের কম ক্ষরণে থাইরয়েডের ক্ষরণ হ্রাস পায় এবং ক্ষরণ বেড়ে গেলে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বেড়ে যায় ।

G.T.H. বা গোনাডোট্রফিক হরমোন 

GTH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । GTH হরমোনের কাজ হল :- গোনাডো বা জনন গ্রন্থির (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে ।


F.S.H. বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন

FSH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । FSH হরমোনের কাজ হল :- স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল বা ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে এবং তা থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরিত হতে সাহায্য করে ।

I.C.S.H. ইন্টারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন

ICSH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । ICSH হরমোনের কাজ হল :- পুরুষ দেহে শুক্রাশয়ের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষসমূহকে উদ্দীপিত করে টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে ।


L.H. বা লিউটিনাইজিং হরমোন

LH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । LH হরমোনের কাজ হল-
স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের করপাস লিউটিয়াম বা পীত গ্রন্থি গঠনে এবং তা থেকে প্রজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে ।


L.T.H. বা লিউটোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন

LTH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । LTH হরমোনের কাজ হল-
মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ ক্ষরণে সহায়তা করে ।


পিটুইটারি হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ

পিটুইটারি নির্যাস ইনজেক্ট করে অর্থাৎ দেহে প্রবেশ করিয়ে দুগ্ধবতী গাভির দুধের উত্পাদন বাড়ানো হয় । মাছের কৃত্রিম প্রজননের সময় পিটুইটারি নির্যাস ইনজেকসন করা হয়, ফলে স্ত্রীমাছ সঙ্গে সঙ্গে ডিম পাড়ে এবং পুরুষ মাছ তাদের শুক্রাণু নিঃসরণ করে ।

আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স


আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স

অ্যাডরেনাল গ্রন্থি


অ্যাডরেনাল গ্রন্থি
অ্যাডরেনাল গ্রন্থি, এটি ত্রিভুজাকার আকৃতির, প্রতিটি কিডনির উপরে বসে থাকে। অ্যাডরেনাল গ্রন্থির দুটি অংশ রয়েছে এবং প্রতিটির আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে।
  • বাইরের অংশটির নাম অ্যাডরেনাল কর্টেক্স
  • অভ্যন্তরীণ অংশটির নাম অ্যাডরেনাল মেডুলা।

হাইপোহ্যালামাস গ্রন্থি


হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url